Railway Mutton Curry History - Frontier Mail- Kosha Mangsho
Railway Mutton Curry History-Frontier Mail-Kosha Mangsho History
আমাদের অনেকের কাছেই ছুটির দিন মানেই দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা, চায়ে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজে চোখ বুলানো ও দুপুরবেলা অবশ্যই যদি হয় গরম ভাতের সাথে খাসির মাংস।আর কি চাই !
ভোজন রসিকদের কাছে মাংস মানেই আলাদা প্রশান্তি।সে লুচি-মাংস হোক বা গরম ভাতের সাথে হোক বা বাসন্তী পোলা ও খাসির মাংস।সাথে যাই হোক,মাংস কিন্তু চাই।
আজ যা আমাদের সবার প্রিয় কষা মাংস তার পিছনে কিন্তু রয়েছে চলমান ইতিহাস।এর জন্ম কিন্তু কোনো বাড়ির রান্নাঘরে নয়, জন্ম চলতে চলতে।
কিন্তু চলবো কোথায়? যাবো ব্রিটিশ পিরিয়ডে আর চড়ব Frontier Mail এ।
Related Posts : Ledikeni History
Frontier Mail এর কথা বলতে গেলে ব্রিটিশ পিরিয়ডের রেল সম্প্রসারণের ইতিহাসও একটু বলতে হয়।ব্রিটিশ সরকার ভারতে রেল সম্প্রসারণ করবে পরিকল্পনা শুরু করলো ও সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে ১৮৫৭ সালে Robert Maitland Brereton কে ভার দেওয়া হলো এই রেল সম্প্রসারণ কাজের। রেল এর কাজ তো সম্পূর্ণ হলোই সাথে সাথে নতুন মাইলস্টোন রচনা হলো।১৮৬৭ সালের জুন মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের এলাহাবাদ জবলপুর লাইনের মাধ্যমে শুরু হলো পথ চলা।এই রেলের যাত্রাকে আরও সুন্দর, উপভোগ্য ও স্মরণীয় করে রাখার জন্য তারা ভারতীয় অতিথি সেবার ধারাকে মাথায় রেখে ট্রেনেই চালু করলেন Pantry Car এর ব্যবস্থা।১৯০৩ সালের প্রথম দিকে মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে ডাইনিং কার (Car) চালু হয়।এর আগে সকালে, দ্বিপ্রহরে ও রাতের খাবারের জন্য হলট্ করা হতো বিভিন্ন প্লাটফর্মে। প্লাটফর্মে ছিল ইউরোপিয়ানদের জন্য আলাদা ঘর,মুসলিমদের জন্য আলাদা ও হিন্দু নিরামিষাশী (Veg) ও হিন্দু মাংসাশী (Non-veg) লোকেদের জন্য আলাদা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা। এ তো গেল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কথা। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্যও ছিল রেল টিকিট দেখিয়ে কুপনের বিনিময়ে সুন্দর খাবারের সুবিধা।
মোটের ওপর ব্রেকফাস্টের মেনুতে সব থেকে বেশি পছন্দের ছিল - Muffin,Waffles,Egg with English Tea.
এই ট্রেনগুলোর মধ্যে Frontier Mail ছিল আলাদা। একে Rolls Royce এর সাথে তুলনা করা হতো সেই সময়ে।সেই যুগের ট্রেন হিসাবেও সেখানে ছিল সব রকম আধুনিক সুবিধা। বরফের চাই দিয়ে ট্রেনকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা ছিল। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নিজের আত্মজীবনীতে Frontier Mail এর উল্লেখ করেছেন যে,তিনি কলকাতা থেকে বোম্বে ও সেখান থেকে পেশোয়ার গেছিলেন এই ট্রেনে চড়েই। Frontier Mail ছিল ভারতের পশ্চিমাঞ্চল দ্বারা পরিচালিত সুপারফাস্ট,বিলাসবহুল ট্রেন। এই ট্রেনের প্রথম শ্রেণিতে পরিবেশন করা হতো সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সব খাবার।এই ট্রেনের Pantry Car এই জন্ম হয়েছিল কষা মাংসের। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নাম হোয়েছিল গোল্ডেন টেম্পল মেল।রোজ ছুটতে এই ট্রেন বোম্বে ও পাঞ্জাব এর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে।
মজার জন্ম বৃত্তান্ত।এক ব্রিটিশ অফিসার বেশ রাতে হঠাৎ হাজির হন ট্রেনের ক্যান্টিনে,কিছু খাবারের আশায়।গোরা সাহেবদের ডিনার আগে পরিবেশন করে,ক্যান্টিনে পাচকরা তখন নিজেদের খাবার প্রস্তুতে ব্যস্ত।রান্না চলছিল কলকাতার ঝাল ঝাল মাংস।সাহেবের আবদারে কি খেতে দেবে জিজ্ঞাসা করায় মাংসের গন্ধে লোভে পড়ে সাহেব সেটি খেতে চায়।কিন্তু সাহেবের স্বাদকোরকের তুলনায় সেটা বেশ বেমানান।কিন্তু শত ঝাল,তেল মশলা থাকলেও সেটা সাহেব খেয়েছিলেন।পাচকরাই অনুভব করেছিল সে কথা।সাহেব অনুরোধ জানান যে পরবর্তী সময় এই মাংস যদি আর একটু হালকা করে করা সম্ভব হয়।তাই পরবর্তী সময় সেই সাহেব যখন ট্রেনে আসেন সেই মাংসকে একটু হালকা করে কিছু বিদেশি মশলা ও দই সহযোগে ঝালের পরিমাণ কমিয়ে আগের থেকে পাতলা করে সাহেবকে পরিবেশন করা হয়।সাহেব তো প্রেমে পড়ে যান সেই মাংসের।তার পর থেকে সেই সাহেব ট্রেনে উঠলেই অর্ডার করতেন কষা পাঁঠার মাংসের ঝোলের। সাহেবের নিজের দেয়া এই নাম "রেলওয়ে মটন কারী "। সেই শুরু হলো প্রথম শ্রেণির সকলের জন্যই রেলওয়ে মটন কারী।ট্রেন এর সুনাম এর সাথে আরও মাত্রা যোগ করলো তার এই 'অ্যাংলো- ইন্ডিয়ান ডিশ' '। এক কথায় যা আজকে হলে বলা হতো ফিউশন ডিশ।
ফিউশন এইকারনেই যে,এখানে ব্যবহার করা হয়েছিল বিদেশি মশলা যেমন-লবঙ্গ,দারচিনি,তেজপাতা,গোলমরিচ এবং দেশীয় মশলা যেমন- শুকনো লঙ্কা,জিরে,ধনে,হলুদ, আর তার সাথে মিশে পাচকের কারিগরী।
Frontier Mail এর সিগনেচার ডিশ দিনে দিনে এই ট্রেন থেকে ওই ট্রেন,বড়ো বড়ো হোটেল থেকে ঢুকলো আমাদের অন্দরের রান্নাঘরে।
যদিও কাঠের ঢিমে আঁচে এই মটনের স্বাদই আলাদা হতো।এখন বদলের ও ব্যস্ততার দুনিয়ায় কাঠের আঁচ আর কজনের বাড়ি আছে।গ্যাস ও প্রেসার কুকারই সম্বল আমাদের।
কষা মাংসের সাথে রেলওয়ে মটন কারীর পার্থক্য:-
প্রথমত,কষা মাংসকে একটু কম মশলাদার ও একটু হালকা পাতলা করে রাঁধলেই সেটা হবে রেলওয়ে মটন কারী।
দ্বিতীয়ত,রান্নার প্রণালীতে আছে সামান্য পার্থক্য।আমরা সাধারণত কষা মাংসকে মশলা মাখিয়ে বেশ কিছুক্ষন রাখি।যাকে ম্যারিনেশান বলি আমরা।তারপর তেলে মশলার সাথে কষে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নি।কিন্তু রেলওয়ে মটন কারীর ক্ষেত্রে মাংসটা আগে সিদ্ধ করে, মশলার সাথে পরে যোগ করতে হয়।
You can also visit : Chatu-Babu-Latu-Babu, Kolkata Heritage Buildings, Itachuna Rajbari, Denmark Tavern, Zebra Pulled Car, Ramnagar Fort, Chunar Fort, Tagore's House in England, Bengal English Castle, Mahalaya, Nanibala Devi, Cricket Ball History, Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo
আর আজই বানিয়ে ফেলুন ঐতিহাসিক এই মাংসটি।আর কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন আমায়।
উপকরণ:-
খাসির মাংস -১কেজি(মিডিয়াম সাইজ)
আলু -(৬ টুকরো,খোসা ছাড়ানো)
পিয়াজ কুঁচি-(২০০গ্রাম)
আদা বাটা-(১ চামচ)
রসুন বাটা-(১ চামচ)
টমেটো কুচি-(২টো)
টক দই (৩ চামচ )
সরষের তেল(আপনাদের পছন্দমত)
নুন(পরিমাণ মত)
হলুদ(১ চামচ )
শুকনো লঙ্কা(২টো)
গোটা জিরে (১/২ চামচ )
তেজপাতা(২ টো )
লবঙ্গ( ৪ কে)
দারচিনি
গোলমরিচ
ছোটো এলাচ (২ টো )
ধনে গুঁড়ো/বাটা(১ চামচ )
জিরে গুঁড়ো/বাটা(১ চামচ )
কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো(১ চামচ )
নারকেলের দুধ (৩/৪ কাপ)
উষ্ণ জল
ধনেপাতা কুচি (নাও দিতে পারেন)
রন্ধন প্রনালী :-
১.প্রথমেই মাংসকে ২ কাপ জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে প্রায় ৮০ ভাগ।
২.এবার কড়াইতে সরষের তেল দিয়ে তাতে ওপরে বর্ণিত গোটা গরম মশলা,তেজপাতা,জিরে,শুকনো লঙ্কা ফোরণ দিন।
৩.এরপর একে একে পিয়াঁজ কুচি,আদা,রসুন বাটা, টমেটো কুচি দিন।ভালো করে কষতে থাকুন।এর পর নুন,হলুদ দিন,লঙ্কা গুঁড়ো দিন।
৪.ভালো করে ধুয়ে রাখা খোসা ছাড়ানো দুভাগ করা আলু দিয়ে দিন এবার।ভালো করে কষিয়ে উষ্ণ জল দিন পরিমাণমত।এই জলেই সেদ্ধ হবে আলু।চাপা দিয়ে আলু সেদ্ধ হতে দিন।
৫.আলু প্রায় সেদ্ধ হয় এলে আগে থেকে সেদ্ধ করা মাংসটা এর মধ্যে দিয়ে দিন।
৬. সাথে দিন ফেটানো টকদই।নারকেলের দুধ টাও দিয়ে দিন।সব আর একবার নাড়িয়ে ছোটো এলাচ দিন ২,৩ টে। গ্যাস মিডিয়াম ফ্লেমে রেখে চাপা দিন ১০ মিনিটের জন্য।
(নারকেলের দুধ ইচ্ছা হলে না ও যোগ করতে পারেন)
৭.সুগন্ধ বেরোলেই বুঝবেন রেলওয়ে মটন কারী তৈরি।এই গন্ধেতেই কিন্তু পাগল হয়েছিলেন গোরা সাহেব।
রুটি, নান বা গরম ভাতের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন এই রেলওয়ে মটন কারী।
Page ta darun
উত্তরমুছুনThank You. Baki lekha guli porben. Bhalo lagle follow korben.
মুছুনDarun
উত্তরমুছুনKhubie bhalo laglo pore. Aro lekho aro egiye jao
উত্তরমুছুনAwesome posts. Really helpful blog
উত্তরমুছুন