Jaikrishna Public Library-Heritage Library-Uttarpara

Jaikrishna Public Library-Heritage Library-Uttarpara Library
ইটালিয়ান স্থাপত্যের অভূতপূর্ব নিদর্শন যাকে দেখে এক ঝলকে রাজবাড়ি বলে মনে করতেই পারেন।আসলে যেটি উত্তরপাড়ায় জয় কৃষ্ণ লাইব্রেরী।উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ পাবলিক লাইব্রেরী পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা গ্রন্থাগার।এশিয়ার প্রথম পাবলিক লাইব্রেরী গুলোর মধ্যে অন্যতম।হুগলী নদীর তীরে ছোট্ট শহর উত্তরপাড়ায় বাবু জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় (১৮০৮-১৮৮৮) এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই লাইব্রেরী তৈরি হয়েছিল,যা ১৮৫৯ সালে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।এটিকে জাতীয় হেরিটেজ ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।

এক শীতের দুপুরে আমিও হাজির হয়েছিলাম এই লাইব্রেরীতে। গাড়িতে বালি ব্রিজ পেরিয়ে আমাদের গাড়ি এসে থেমেছিল এই লাইব্রেরীর লোহার ফটকের সামনে। হুগলি নদীর তীরে গ্র্যান্ড ট্যাংক রোডের পাশে এই বিশাল লাইব্রেরীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আমি। লম্বা লম্বা থামওয়ালা প্রাসাদোপম বাড়ি, কাঠের বিশাল ঝুলন্ত বারান্দা, ছক কাটা মেঝে, উজ্জ্বল সবুজ খড়খড়িওয়ালা জানলা, কাঠের রাজকীয় আসবাবপত্র এমন এক যুগের স্মৃতি বয়ে আনে, যা হারিয়ে গিয়েছে অনেক অনেক আগে।এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় জাদুঘর, কিংবা জাতীয় গ্রন্থাগারের মতোই এই লাইব্রেরীও বাঙালি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ধারক ও বাহক।
You should also visit this ( Only 2 KM from here ) :

উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী শুধু বইয়ের স্তূপ ছিল না। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির মিলনস্থল ছিল এই স্থানটি। তাঁরা আসতেন, থাকতেন, পড়তেন, নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চলত।১৮৬৬ সালে বিদ্যাসাগর এই লাইব্রেরীতে এসেছিলেন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ মেরি কারপেন্টারকে সঙ্গে নিয়ে। কিছুকাল পরে যখন তাঁর বই 'Six Months in India' প্রকাশিত হয়, সেখানে এই লাইব্রেরীর একটি সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়। মিস কারপেন্টারের ভাষায়, "বাড়িটির নিচের তলায় ছিল গ্রন্থাগার, এবং উপরের তলার ঘরগুলি বিখ্যাত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের(ভিজিটর) থাকার জন্যে এবং সভাসমিতি করার জন্যে রাখা হয়েছিল।এই বিখ্যাত এবং শ্রদ্ধেয় ভিজিটরদের মধ্যে কিছু নাম পাওয়া যায়, যেমন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত(১৮৬৯ এবং ১৮৭৩ সালে পরিবার সহ দু মাস কাটিয়ে গেছেন), স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার, জন এইচ এস কানিংহাম, রেভারেন্ড জেমস লং, স্যার আর্থার ওয়েলেসলী, স্যার আ্যসলী ইডেন, স্যার এডুইন আর্ণল্ড, স্যার রিভারস থম্পসন, মারকুইস অব ডাফরিন এবং আভা ডাফরিন, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জ্জী, কেশবচন্দ্র সেন, বিপিন পাল, ১৯০৯ সালে স্বামী বিবেকানন্দ। এই লাইব্রেরীর পিছনদিকে প্রশস্ত সিঁড়ির মধ্যভাগ জুড়ে আছে ঋষি অরবিন্দর একটি স্থাপিত মূর্তি, ঋষি অরবিন্দর উত্তরপাড়া অভিভাষণ এবং ১৯০৮ ও ১৯০৯ সালের সমাবেশে উপস্থিতির স্মৃতি রক্ষায় লাইব্রেরীর সিড়ির সম্মুখভাগে ফলক স্থাপন করা হয়(১৯৫৫ খ্রী:)।
Related Posts : Denmark Tavern,Abanindranath Thakur's Bagan Bari,Metcalfe Hall

১৮৫৯ সালের ১৫ এপ্রিল, জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের প্রথম(এবং সম্ভবত এশিয়াতেও) বিনামূল্যে জনসাধারনের জন্যে গ্রন্থাগার খুলে দেন। উত্তরপাড়া পাবলিক লাইব্রেরী নামে পরিচিত এই গ্রন্থাগারটি মূলত জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জীর ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে তৈরী হয়। ১৮৫১ সালের শেষদিক পর্যন্ত এটি শুধুমাত্র গবেষকদের জন্য খোলা থাকতো। হুগলি নদীর তীরে এই গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৫৬ সালে। ৮৫০০০ টাকা খরচ করে এক একর জমির উপরে লাইব্রেরীটি তৈরী হয়। প্রাথমিকভাবে ৭ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল।একজন গ্রন্থাগারিক,একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক, একজন ক্লার্ক, দুইজন মালি, এক ঝাড়ুদার এবং এক দারোয়ান। তিনি উত্তরপাড়ার নাগরিকদের একটি গ্রূপকে লাইব্রেরীর দেখাশোনা করার কাজে নিয়োগ করেন।

শুরুতে, গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ৩০০০ বই এবং অনেকগুলি পত্রিকা ছিল, প্রায় সবগুলিই জয়কৃষ্ণের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে। এখনো পর্যন্ত, গ্রন্থাগারে ৪৫০০০ পুরানো এবং বিরল বই (১৭শতক থেকে ১৯ শতকের), ৬৫০০০ নতুন বই (উভয় বাংলা এবং ইংরেজি)।পুরনো দিনের পত্রিকা যেমন 'দিকদর্শন', 'সংবাদ রসরাজ', 'সোমপ্রকাশ', 'তত্ত্ববোধিনী', 'ক্যালকাটা মান্থলি জার্নাল(Calcutta Monthly Journal)' এবং 'বেঙ্গল ক্রনিকল(Bengal Chronicle)' এরকম কিছু উল্লেখযোগ্য পত্রিকা এই লাইব্রেরীতে আপন মহিমায় বিদ্যমান।রেভারেণ্ড জেমস লংএর লেখা স্বদেশীয় বইয়ের তালিকার বেশিরভাগ বইই এই লাইব্রেরীর অন্তর্ভুক্ত।

জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জী একজন বাঙালী জমিদার এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। ১৮০৮ সালে উত্তরপাড়ায় একজন কেরানীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম জগনমোহন মুখার্জ্জী। পৈত্রিক ব্যবসাসুত্রে জয়কৃষ্ণ ছেলেবেলাতেই (৮ বছর বয়সে) বাবার সাথে মীরাট চলে যান। সেখানে একটি রেজিমেন্টাল স্কুলে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে ১৮৩০সালে হুগলী রাজস্ববিভাগের হিসাবরক্ষক কেরানী হিসেবে নিযুক্ত হন। বন্যার কারণে তখন চাষবাসের মন্দা দেখা দেওয়ায় এস্টেটগুলি একের পর এক বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল, জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জী এই এস্টেটগুলিকে কিনে নেন। ধীরে ধীরে ওনার সম্পত্তির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমউচ্চতায় পৌঁছায়। এমনকি তখন দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩৮ সালে যে জমিদারদের সংঘ পত্তন করেছিলেন, জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জী সেই সংঘের এক গুরুত্বপূর্ন সদস্য ছিলেন।জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জী জাতীয়তাবাদী এবং উৎসাহী সমাজ সংস্কারক ছিলেন। ১৮৫১ সালের কলেরা মহামারীর পর তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের পর উত্তরপাড়া পৌরসভা তৈরী হয়।উত্তরপাড়ায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য অনেক স্কুল তৈরী করেন তিনি। উত্তরপাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠাতেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।কলকাতার জন বেথুন কলেজের প্রতিষ্ঠার জন্য়ে তিনি ১০০০০ টাকা দান করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের জন্যেও ৫০০০ টাকা দান করেন।নিজের জমিদারীতে অনেকগুলি কৃষি সংস্কার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি বিধবা বিবাহ চালু করার জন্য ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবেদনের প্রথম স্বাক্ষরকারী ছিলেন।

জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জীর ইচ্ছা ছিল তাঁর মৃত্যুর পর লাইব্রেরীটি একটি নাগরিকদের গ্রূপ দ্বারা পরিচালিত হোক। ১৮৮৮ সালে জয়কৃষ্ণ মুখার্জ্জীর দেহাবসানের পর এই লাইব্রেরীটি অনেক আর্থিক এবং আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। এই অমুল্য পুঁথিরাজি এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত দালানটি স্ংস্কারের অভাবে ধুঁকতে থাকে। ১৯৫৪ সালে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় (তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী) লাইব্রেরীটির ব্যাবস্থাপক সমিতির সাথে কিছু আলাপ আলোচনা করেন এবং কিছু আশ্বাস দেন। শেষমেষ ১৯৫৮ সালে এই লাইব্রেরীটি 'স্থানীয় গ্রন্থাগার' হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং বাৎসরিক ৬৪০০০টাকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে বরাদ্দ হয়।১৯৬৪ সালের ১৫ই জুন উত্তরপাড়া পাবলিক লাইব্রেরি সরকারী হাতে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৬সালে শ্রীমতি প্রতিভা পাটিল (ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি) লাইব্রেরীটির দেড়শত বছর উদ্যাপনে অংশগ্রহণ করেন। উনি বইগুলির সংরক্ষনের জন্যে ১০লক্ষ টাকা প্রদান করেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডয়া
Visoooon valo.. kottooo ojana tothyo.. ❤️
উত্তরমুছুনDarun information
উত্তরমুছুনNijer jaygar jinis dekhteh ki je bhalo lage.
উত্তরমুছুনUttarpara Govt High School er History niye kichu likhun please......
উত্তরমুছুন