Lucknow Dayout Plan-Famous Food-Lucknow Chikan
Lucknow Dayout Plan-Lucknow Tour-Lucknow Nawabi Food-Lucknow Chikan
প্রাচীন ঐতিহাসিক শহর লক্ষ্ণৌর রন্ধ্রে রন্ধ্রে নবাবিয়ানা,আওয়াধি খানা। পুরোনো লক্ষ্ণৌতে চোখে পড়বে আওয়াধি স্থাপত্যও।ঘোড়ায় টানা গাড়ি শহরের বুকে টগবগিয়ে ছোটার সাথে সাথে পুরোনো প্যালেসগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা ঠুমরী,গজল, কথকের না জানি কত কথা মনে করিয়ে দেবে। বড়ো ইমামবাড়া,ভুলভুলাইয়া,রুমি দরজা,ব্রিটিশ রেসিডেন্সির পাশাপাশি নতুন লক্ষ্ণৌর গোমতী নগর, আম্বেদকর পার্ক ঘুরে দেখা যায় একদিনেই।লক্ষ্ণৌ ঘোরার অন্যতম অংশ,ভোজন রসিকদের কাছে মূল আকর্ষণও বলতে পারেন, লক্ষ্ণৌর কাবাব।সাথে দস্তার খান বা ইদ্রিসের বিরিয়ানি,প্রকাশ কুলফি আরও কত কি। কাবাবের চল আমাদের এখানে হালে হলেও লক্ষ্ণৌতে সেই নবাব আমল থেকেই।আর আসার সময় মন ভরে কিনে এনেছিলাম লক্ষ্ণৌ চিকনের নানান জিনিস, আতর।ঘোরা,খাওয়া,কেনাকাটা সবের জন্যই দিন বরাদ্দ করেই লক্ষ্ণৌ ঘুরেছিলাম।সে স্মৃতি আজও তাই তাজা।ঘরে বসে আপনারাও লক্ষ্ণৌ মানাসভ্রমন বা স্মৃতি রোমন্থন করে নিতে পারেন আমার এই ভিডিওটির মাধ্যমে।লক্ষ্ণৌ স্পেশাল খাবারগুলো ও পাবেন ভিডিওটিতে 👇👇
বড়ো ইমামবাড়া
আমরা সবাই জানি বড়ো ইমামবাড়া মানেই লক্ষ্ণৌ,ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর।রন্ধ্রে রন্ধ্রে যার নবাবিয়ানা।কোন একসময়ের লক্ষনাবতি থেকে কালের স্রোতে আজকের লক্ষ্ণৌ। আর এই লক্ষ্ণৌকে স্থাপত্যে মুড়ে চিরস্মরণীয় করে তোলেন আওয়াধের নবাব আসাফ-উদ-দৌলা। তিনিই ফাইজাবাদ থেকে লক্ষ্ণৌতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।রুমি দরজা থেকে বড়ো ইমামবাড়া, ভুলভুলইয়া সবই তার সময়ের নজির।১৭৮৪ সালে এটি তৈরি হয় কিন্তু নেহাত স্থাপত্য সৃষ্টি ছিল না নবাবের উদ্দেশ্য,এর পিছনে ছিল প্রজাবৎসল রাজার মহানুভবতা।
নবাব আসাফ-উদ-দৌলার রাজত্বকালীন লক্ষ্ণৌতে দূর্ভিক্ষ হয়েছিল,নগরীতে পড়েছিল খাবারের আকাল,তখন নবাব মনস্থির করলেন এমন এক স্থাপত্য তিনি বানাবেন যাতে সৃষ্টির বিনিময়ে কারিগররা পাবে অন্ন।দেশের সমস্ত বড় বড় স্থপতিদের থেকে নকশা নিয়ে হলো নকশার প্রতিযোগিতা।অবশেষে কিফায়াতুল্লাহর নকশা অনুযায়ী শুরু হলো ইমামবাড়া গড়ার কাজ।নবাব ঘোষণা করলেন যারা এই ইমামবাড়ার তৈরির কাজে নিজেদের যুক্ত করবে বিনিময়ে পাবে দুবেলার খাবার।দিনে একদল যেটুকু গড়ত, রাতে আর একদল সেটুকু ভেঙে ফেলতো,ফলত সকলেই পেত আহার।অদ্ভুত লাগলেও এভাবেই চলেছিল গড়া-ভাঙার খেলা ১৪ বছর ধরে যতদিনে লক্ষ্ণৌও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল।সাথে সাথেই চলেছিল ভুলভলাইয়া তৈরির কাজ। এই সব স্থাপত্য শৈলীর পিছনে যদিও আজ চাপা পড়ে গেছে এটি তৈরির ইতিহাস,রাজার মহানুভবতার কথা।শুধু ইমামবাড়া নয়,ভুলভুলাইয়া সহ আরও অনেক অতুলনীয় শিল্প,সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে আছে গোটা লক্ষ্ণৌ জুড়েই।
বাওলি
কথায় বলে,অতীতের মধ্যেই লুকানো থাকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার বীজ।এই কথাটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ লক্ষ্ণৌর বড়ো ইমামবাড়ার মধ্যে অবস্থিত শাহী বাওলি।বাওলি কথাটি একটি হিন্দি শব্দ,যার অর্থ প্রাকৃতিক জলের তৈরি জলাধার,সেটা হতে পারে ভূমিজল, নদীর জল অথবা বৃষ্টির জলের রিজার্ভার।সারা ভারতে অনেক জায়গায় এর দেখা মেলে,রাজস্থান,গুজরাটের উচ্চারণ ভিন্ন যদিও।তবে প্রতি ক্ষেত্রেই গঠনগত ভাবে অনেক সিঁড়ি নিচে নেমে এই জলের দেখা মেলে।
লক্ষ্ণৌর বাওলিটি একটি গভীর জলাধার তো বটেই, যেখানে নদীর জল এসে জমা হত,অজস্র সিঁড়ি যার নিচে নেমেছে,যে জলকে ঘিরে আর্চের মত স্তরে স্তরে দাঁড়িয়ে আছে মজবুত স্থাপত্য। জলাধার হলেও এটির ছিল আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।শাহী বাওলির স্বচ্ছ জলে ভেসে উঠতো বহুদূরের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।সেই জলের দিকে তাকিয়ে পাহাড়ায় থাকতো পাহাড়াদার।পাহাড়াদার গেটে দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেও,সেই ব্যাক্তি কিন্তু ভিতরের কিছুই দেখতে পেত না।সন্দেহজনক মনে হলে প্রবেশের আগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো বা প্রয়োজনে পালানোর সময়ও পেত ভিতরে থাকা সকলে।ঠিক এখন CCTV এই কাজটাই তো করে থাকে।গেটের বাইরে কি ঘটছে তা ঘরের ভিতর থেকেই নজরদারী করা সম্ভব।যার উৎপত্তি হয়েছিল সেই নবাব আসাফ-উদ্- দৌলার আমলে।
ভারতে ছড়িয়ে থাকা নানান বাওলির মধ্যে একমাত্র লক্ষ্ণৌ এর বাওলি ও দিল্লির অগ্রসেনের বাওলিই গঠনগত ভাবে সদৃশ।এক নজরে দেখলে একই মনে হবে।
বর্তমানে 'Piku' সিনেমার শুটিং হয়েছিল অগ্রসনের বাওলি থেকে,যেখানে সলমন খানের 'Sultan' সিনেমার শুটিং হয়েছিল লক্ষ্ণৌ এর বাওলি থেকে।
বর্তমানে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যতই হই না কেন,কিছু কিছু স্থাপত্য আজও আমাদের তাক লাগিয়ে দেয়, ভাবায় এত সহস্র বছর আগেও কি করে সম্ভব এই বৈজ্ঞানিক স্থাপত্যরীতির।আজ যদিও বাওলি জলশূন্য অতীতের সাক্ষী স্বরূপ দাঁড়িয়ে।
ভুলভুলাইয়া
বড়ো ইমামবাড়ার মধ্যে অবস্থিত এটি একটি মানুষের তৈরি গোলক ধাঁধা।সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে মোড়ে মোড়ে ৪টি পথ যার ৩টি ভূল ও একটি সঠিক।এই সঠিক পথটি ধরলে উচুঁ নিচু হয়ে পথ পৌঁছে দেবে ইমামবাড়ার ছাদে।গোলকধাঁধাটি সৃষ্টির পিছনে নানান কথা প্রচলিত।কারো মতে নবাব বেগমদের নিয়ে এখানে লুকোচুরি খেলতেন,কেউ বা বলেন শত্রু পক্ষের থেকে আত্মরক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা,যাতে অচেনা আক্রমণকারী রা ভুলভুলাইয়াতে পথ হারিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে।তবে কারো মতে ভুলভুলাইয়ার বৈজ্ঞানিক স্থাপত্য রক্ষা করছে ইমামবাড়ার ভারসাম্য। ইমামবাড়ায় ব্যাবহার করা হয়নি কোনো রড বা পিলার।ইমামবাড়ার প্রকান্ড চত্তরে আছে আসফি মসজিদ,আছে সুন্দর পরিচর্যায় ফুলের বাগান।
রুমি দরজা
বড়ো ইমামবাড়া ও ছোটো ইমামবাড়ার মাঝে আছে রুমি দরজা।৬০ফুট উঁচু এই রুমি দরজা আওয়াধি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।এক কথায় একে গেটওয়ে অফ লক্ষ্ণৌ বলতেই পারেন।
নবাব মহম্মদ আলী শাহ্ এটি নির্মাণ করান।আগ্রার তাজমহলের স্থাপত্যে মুগ্ধ হয়ে তিনিও শ্বেত পাথরের এই ছোটো ইমামবাড়া নির্মাণ করান।ঢোকার মুখেই আছে সে সময়কার নবাবের স্নানাগারটি যাকে বলে হামাম,যার প্রযুক্তি সত্যি আজও তাক লাগাবে।আছে সমাধিস্থল।
ক্লক টাওয়ার
হুসেনবাদী ক্লক টাওয়ারটি লন্ডন বিগবেন এর আদলে বানানো হয়েছিল।ভারতের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার।নাসিরউদ্দিন হায়দার বানান।এই ক্লক টাওয়ারের সামনে আছে বিশাল জলাধার।আছে পিকচার গ্যালারী।
পিকচার গ্যালারী
মহম্মদ আলি শাহ্ এটি নির্মাণ করা ন।এটি লক্ষ্ণৌর সবচেয়ে পুরনো পিকচার গ্যালারি।যেখানে আছে সকল নবাবদের ছবি সহ নবাবী আমলের অলঙ্কার ও নানান ব্যবহৃত জিনিসও। আর ছবিগুলি তে আছে অপটিক্যাল ইলিউশন,সকল দিক থেকেই ছবিগুলো আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সাতখান্ডা
সাততলার এই টাওয়ারটি সম্পূর্ন করার আগেই নবাব আলী শাহ্ পরলোক গমন করেন বলে এটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।যার উদ্দেশ্য ছিল উচুঁ এই টাওয়ার থেকে ঈদের চাঁদ দেখা।
কেইজারবাগ প্যালেস
এই কেইজারবাগ এলাকাতে ছড়িয়ে আছে সেকালের পুরোনো নানান প্যালেস,মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন।নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ্ কেইসার বাগ প্যালেস টি নির্মাণ করা ন অত্যন্ত যত্নে,অনেক খরচ করে।বিশাল পরিধি নিয়ে ছিল এই প্যালেস যার সামনে ছিল বাগান।আজ পালেসের সামনে আছে একটি সুন্দর পার্ক, I love Lucknow. আছে সফেদ বারাদ্রি, হজরত মহল পার্ক।
আম্বেদকর মেমোরিয়াল পার্ক
আছে গোমতী নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আম্বেদকর পার্ক। উত্তরপ্রদেশের এককালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এই পার্কটি তৈরি করিয়েছিলেন।অনন্ত বিস্তৃত এই পার্কে আছে মার্বেলের হাতির সমাহার। ৬২ জোড়া হাতী আছে ১০৮ একরের এই পার্কে।সন্ধ্যার আলোয়,নদী থেকে আসা হাওয়ায় অপূর্ব লাগবে সময় কাটাতে এই পার্কে।পাশেই মারিন ড্রাইভ।
ব্রিটিশ রেসিডেন্সি
এই ব্রিটিশ রেসিডেন্সি আজ ধ্বংসাবশেষ হলেও এর ইঁট কাঠ পাথর বলে দেয় এই জায়গাই ছিল ব্রিটিশদের বাসস্থান সহ নানাবিধ কাজের প্রানবিন্দু।তাই সিপাহী বিদ্রোহের সময় ভারতীয় সিপাহীদের রোষের আগুন ধংস করেছিল এই ব্রিটিশ রেসিডেন্সিকে।বিশাল পরিধির এই এলাকায় সবুজের সমারোহে আছে একটি মিউজিয়ামও।পুরোনো লক্ষ্ণৌ ও নবাব আমলের অনেক ইতিহাসই এখানে সযত্নে রক্ষিত আজ।
লক্ষ্ণৌর আকর্ষণ কিন্তু শুধুই তার স্থাপত্যে নয় আছে আকর্ষণীয় নন ভেজ হরেকরকম খাবার।
কাবাবের খোঁজে চলুন যাই
যে খাবারগুলো না খেলে লক্ষ্ণৌ ঘোরা অসম্পূর্ণ ও সেইগুলোর জন্য বিখ্যাত দোকানগুলো ছড়িয়ে আছে আমিনাবাদ থেকে হজরতগঞ্জ জুড়ে।
১.তুন্ডে কাবাবী - গলৌটি কাবাব
২. দাস্তার খান- বিরিয়ানি,ফিশ টিক্কা, সিরমাল
৩.ইদ্রিসের - বিরিয়ানি
৪. রহিমের নাহারি, কুলচা
৫.প্রকাশ কুলফি,মালাইপান
৬. রয়ালের বাস্কেট চাট
৭.শর্মাজির চা
৮.গুলাবি চা(পিঙ্ক টি)
লক্ষ্ণৌর পরিবহন ব্যাবস্থা খুবই উন্নত। তাঙ্গা গাড়ি থেকে UBER , SOLO BIKE CAB সবই পাবেন।লক্ষ্ণৌ বেড়ানোর সময় আরও একটি জিনিস যেটি অবাক করেছিল আমায়,সেটি হলো ক্রসিংয়ে ছিল না কোনো সিগনাল।তাও প্রত্যেকেই পারস্পরিক সহযোগিতায় চলাচল অক্ষুন্ন রেখে চলেছে কোনো রকম যানজট ছাড়াই।
শপিং
ঘোরার শেষে শপিং এর জন্য পাবেন লক্ষ্ণৌ চিকন, আতর,মোরব্বা,পুরোনো অ্যান্টিক নানান জিনিসপত্র।শপিংয়ের জন্য যেমন আছে হজরতগঞ্জের আধুনিক শপিং মল সহ শপিং চত্বর তেমনই আছে আমিনবাদ বা পুরোনো চক এলাকা।
নবাবের দেশে ট্যুরিস্ট বেশে কাবাবের স্বাদ নিয়ে লক্ষ্ণৌ ঘোরা শেষ হলেও ঘোরা চলতেই থাকবে এভাবেই।
Apurbo
উত্তরমুছুন