Barrackpore Annapurna Mandir-Rani Rashmoni Ghat

Barrackpore Annapurna Mandir-Rani Rashmoni Ghat-Places to visit in Barrackpore

Barrackpore Annapurna Mandir-Rani Rashmoni Ghat-Places to visit in Barrackpore

প্রথম দর্শনেই মনে হলো এ কোন মন্দির? অবিকল দক্ষিণেশ্বর এর মত দেখতে। কিন্তু এ তো দক্ষিণেশ্বর নয়। ব্যারাকপুর।হ্যা।ব্যারাকপুর তালপুকুর অঞ্চলে ইংরেজদের কেন্টনমেনট এর অনতিদূরেই রাণী রাসমণি ঘাটের ধারে গড়ে উঠেছিল একটি অন্নপূর্ণা মন্দির,যা অবিকল দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের মত দেখতে।


মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাণী রাসমণি দেবীর কনিষ্ঠ কন্যা জগদম্বাদেবী।দক্ষিণেশ্বর মন্দির স্থাপনের ২০বছর পর সদৃশ এই মন্দির ১৮৭৫ সালের ১২ ই এপ্রিল উদ্বোধন হয়।উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।এই মন্দির স্থাপনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জগদম্বা দেবীর স্বামী তথা রাসমণি দেবীর জামাই মথুরামোহন বিশ্বাস ও তার কনিষ্ঠ পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস।যদিও মন্দির শেষ দেখে যেতে পারেননি মথুরামোহন বাবু।


অন্ন দিয়ে যিনি দুঃখ দারিদ্র মেটান তিনিই অন্নপূর্ণা।গবেষকদের মতে,অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রভাবেই বাংলায় পসার ঘটেছিল এই পুজোর। আর অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নদীয়ার রাজবাড়ি তথা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। জনশ্রুতি নদীয়ার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় এই পুজোর প্রচলন করেন।শোনা যায়,কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে এই পুজো হতো। আর কাশীর অন্নপূর্ণা মন্দির তো গোটা দেশে প্রসিদ্ধ। এই কাশী অন্নপূর্ণার দর্শনে যাবেন মনস্থ করেছিলেন রাণী রাসমণি ১৮৪৭ সালে।২৫ টা নৌকা সাজিয়ে রওনা হয়েছিলেন তীর্থে।কিন্তু যাত্রা পথে একদিন রাত্রে উঠলো প্রবল ঝড়, পড়লো বাঁধা।সেদিন রাত্রেই  মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেলেন রাসমণি দেবী যে ভাগীরথীর তীরে মন্দির নির্মাণ করে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করার।নির্মাণ হলো আজকের দক্ষিণেশ্বর মন্দির, শুরু হলো মা ভবতারিণীর পুজো। কাশীর অন্নপূর্ণা দর্শনে বিঘ্ন ঘটায় সেই থেকেই জামাই মথুরা মোহন চেয়েছিলেন,উপযুক্ত পবিত্র জায়গায় অন্নপূর্ণা মন্দির নির্মাণ করতে।অবশেষে তার সেই ইচ্ছা পূর্ণ হলো যখন স্বপ্নে তার স্ত্রী জগদম্বা দেখলেন এই মন্দির।কিন্তু তিনি কখনোই তার মার কীর্তিকে ছাপিয়ে যেতে চান নি,তাই এই মন্দির প্রাঙ্গণে শিব মন্দির ৬টি,যেখানে দক্ষিণেশ্বরে ১২টি। প্রথমে গঙ্গার ওপাড়ের শ্রীরামপুরকে এই মন্দিরের উপযুক্ত জায়গা বিবেচনা করলেও পরে চাণকেই নির্মাণ হলো মন্দির। চাণক হলো ব্যারাকপুরের প্রাচীন নাম।


পাঁচ বছর সময় লেগেছিল মন্দির গড়ে উঠতে। দক্ষিণেশ্বরের স্থপতিরাই  ছিলেন এখানেও স্থাপনের মূলে।তৈরি হয়েছিল পঙ্খের কাজ যুক্ত, নটি চূড়া বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দির,নাটমন্দির,২ টি নহবত খানা, ছয়টি আটচালা শিবমন্দির,ভোগের ঘর,গঙ্গার ঘাট (রাসমণি ঘাট)।
ছয়টি শিবমন্দির যথাক্রমে কল্যানেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কিন্নরেশ্বর, কেদারেশ্বর, কৈলাসেশ্বর, কপিলেশ্বর।ছয়টি শিবমন্দিরের প্রতিটিতে রয়েছে প্রায় তিন ফুট উচু কালো রঙের পাথরের শিবলিঙ্গ। তিনটি তিনটি করে শিব মন্দিরের মাঝখানে রয়েছে এক লোহার গেট।গেটের সামনের রাস্তা চলে গেছে গঙ্গার ঘাটে।


মন্দিরে ঢোকার মুখে রয়েছে সিংহদুয়ার।মূল ফটকের ওপর একটি বিশাল সিংহ যেনো পাহারা দিয়ে আসছে এই মন্দিরকে সেই ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে,এটাই বিশ্বাস স্থানীয় প্রাচীন লোকেদের। এই সিংহর মূর্তি নিয়ে আইন আদালত করতে হয়েছিল রাণীমার পরিবারকে, কারণ ইংরেজরা চাননি মন্দিরের দ্বারে এই সিংহ মূর্তি।যেহেতু সিংহ সাম্রাজ্যের প্রতীক তাই এটা ব্রিটিশ ছাড়া কেউ ব্যাবহারের যোগ্য নন,কিন্তু অনেক দিন দুপক্ষই লড়েন এই নিয়ে। শেষে আদালতের রায়ে এটি একটি শিল্পকর্ম হিসাবে বিবেচিত হয় ও সেই থেকে আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিংহটি। 


মূল মন্দিরের সামনেই নাটমন্দির,ঠিক যেমনটি দক্ষিণেশ্বর এ। দক্ষিণেশ্বরের তুলনায় ছোটো।মন্দিরে অধিষ্ঠিত শিব ও অন্নপূর্ণার মূর্তি রূপার আসনে সুসজ্জিত।


দেবী মূর্তি অষ্টধাতুর ও শিব মূর্তি  ও চলচিত্র রুপোর তৈরি।দুবেলা নিত্য পুজো ও অন্নভোগ হয়। ভোগে মাছ থাকা আবশ্যিক। পুরোহিত মহাশয়ের থেকে জানলাম,নিত্য ভোগে থাকে ভাত,ভাজা,২ রকম তরকারি, ডাল,মাছ,চাটনি,মিষ্টি দই,পায়েশ ও পান।ভোগ নিবেদন এর পরই দুপুরে মন্দির বন্ধ হয় বিকেল অবধি। সন্ধ্যা আরতির সময় নিবেদন করা হয় সুজি,মিষ্টি,দুধ,লাড্ডু,বোদে। কালীপুজোর পরের দিন হয় মূল অন্নকূট।তবে অন্নপূর্ণা পুজোর দিন ও হয় পুজো। প্রতি মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে হয় বিশেষ পুজো।



মন্দিরের নিত্যসেবা ও পুজো পার্বণে ব্যয় ভারের জন্য জগদম্বাদেবী সেই সময়ে উপযুক্ত সম্পত্তি দিয়ে "অর্পণনামা" করেছিলেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী জেষ্ঠ্যানুক্রমে বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ হবেন মন্দিরের সেবায়েত। বর্তমানে আর্থিক সঙ্গতি কমেছে তাই সংস্কারের কাজেও ভাঁটা পড়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,এই মন্দিরের কিন্তু শুটিং স্পট হিসাবেও নাম ডাক আছে। বাংলা সিনেমা 'সেদিন দেখা হয়েছিল' মুভিতে দেখা মেলে এই মন্দিরের।

মন্দির খোলার সময় :-
সকাল ৬ টা থেকে ১২ টা
বিকাল ৪.৩০ থেকে ৮ টা

কিভাবে যাবেন :-
ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে অটো/টোটো/রিক্সা। বাসে এলে তালপুকুর বাস স্টপ।সেখানেই পাবেন রিক্সা। রিক্সায় রাসমণি ঘাট বা মন্দির বললেই হবে।পায়ে হেঁটে ও আস্তে পারেন।


ঠিকানা :-

আর কি কি দেখবেন :-
মন্দিরকে উপলক্ষ্য করে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে দেখতে পারেন রাসমণি ঘাট,গান্ধী ঘাট,গান্ধী মিউজিয়াম,মঙ্গল পান্ডে উদ্যান ও ব্রিটিশ পিরিয়ডের কিছু বিল্ডিং, বাংলো।

মন্তব্যসমূহ

Popular Posts

Gobardanga Prasannamoyee Kali Mandir-Gobardanga Kalibari

Rani Rashmoni Ghat Halisahar | Fuchka Gram | Dayouting Near Ganges | Weekend Tours Near Kolkata

চকদীঘি বাগানবাটি | Chakdighi Baganbati | Chakdighi Rajbari | Day Tour | Shooting Locations

Top 10 Rajbari near Kolkata-Zamindar Houses in Bengal-Heritage Home Stay-Dayout Plan-Weekend Tour