Places to visit in Purulia Garh Circuit-Baranti-Garhpanchkot History
ইতিহাসে মোড়া নৈসর্গিক গড়পঞ্চকোট :
গড়পঞ্চকোট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় পঞ্চকোট পাহাড়ের কোলে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল যা বর্তমান পর্যটকদের অতি প্রিয় একটা দর্শনীয় স্থান।যতদূর চোখ যায় পাহাড় আর ঘন জঙ্গল।দিনের বেলা সবুজের গাছে গাছে পাখির কলতান,রাতে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা।চাঁদের আলোয় উঁচুনিচু পাহাড়গুলো বড় অদ্ভুত দেখায়,সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়।বর্ষায় সবুজ পাহাড় ধুয়ে ছন্দে নেমে আসে জলধারা।আর বসন্তে পলাশের চাদরে মোড়া এই গড়পঞ্চকোট।
লেখা ছাড়াও রইলো আপনাদের জন্য গড়পঞ্চকোটের ভিডিওটি :
এত গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা তবে গড়পঞ্চকোটে ইতিহাসও কথা বলে।যদিও সে ইতিহাস আজ অবহেলিত,বর্গী আক্রমণের এক প্রকট নিদর্শন।এককালে গড়পঞ্চকোট পঞ্চকোট রাজাদের রাজধানী ছিল। 'গড়' মানে দুর্গ,'পঞ্চ' মানে পাঁচ এবং 'কোট' মানে গোষ্ঠী।পঞ্চকোটের প্রথম রাজা ছিলেন দামোদর শেখর।লোকমুখে শোনা যায় পুরুলিয়ার ঝালদা অঞ্চলের পাঁচ আদিবাসী গোষ্ঠীর সর্দারদের সাহায্যে তিনি রাজত্ব গড়ে তোলেন।সেই থেকেই নাম গড়পঞ্চকোট।গড়পঞ্চকোট প্রায় পাঁচ মাইল বিস্তৃত একটি দুর্গ ছিল ।এই গড়কে প্রতিরক্ষার জন্য বারো বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে একটি পরিখা ছিল।মূল দুর্গ পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল।এই রাজবংশই ছোট বড় মিলিয়ে এতদঞ্চলে ৪০টিরও বেশি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।যদিও বর্তমানে রয়েছে দু তিনটির ভগ্নাবশেষ।গড়পঞ্চকোটের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো একটি পঞ্চরত্ন টেরাকোটা কাজের দক্ষিণ ও পূর্ব দুয়ারী রাস মন্দির।গঠনে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের সাথে বেশ মিল পাওয়া যাবে।কেন্দ্রীয় চূড়াবিশিষ্ট ভগ্নপ্রায় এই মন্দিরটি প্রায় ষাট ফুট উঁচু।মন্দিরটিতে কোনো বিগ্রহ নেই।উত্তর পশ্চিমদিকে অপর একটি পঞ্চরত্ন টেরাকোটা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে বর্তমানে যার চারটি চূড়া নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কেবলমাত্র মধ্যের ৪০ফুট উঁচু চূড়াটি অবশিষ্ট আছে।গড়ের পশ্চিমদিকে প্রস্তর নির্মিত কঙ্কালী মাতার ভগ্নপ্রায় মন্দিরের দর্শন মেলে। কঙ্কালী মাতা পঞ্চকোট রাজ্যের কুলদেবী ছিলেন।।আছে একটি পঞ্চরত্ন মন্দিরও।যদিও মন্দিরে কোনো দেবদেবীর মূর্তি নেই।মন্দিরসহ পুরো অঞ্চলটি ধ্বংস হয় মারাঠা বর্গীদের আক্রমণে।বাংলায় এসে এই গড় পঞ্চকোটৈ তারা যথেচ্ছ হামলা ও লুটপাঠ চালায়।
মারাঠা অশ্বারোহী রঘুজী ভোঁসলের নির্দেশে বাংলায় প্রবেশ করে ও তারপর ১০বছর ধরে তারা নৃশংস হত্যাকার্য ও ধ্বংসলীলা চালায়।এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বর্গী আক্রমণ।এই বর্গী আক্রমণের ফলে বাংলা প্রায় ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ১৭৫১সালে আলীবর্দী খাঁ এর সঙ্গে মারাঠা দের চুক্তি সাক্ষরিত হলে বাংলায় তখন বর্গী আক্রমনের অবসান ঘটে।বাংলায় প্রবেশের সময় তারা পঞ্চকোটে তাদের অত্যাচারের ছাপ রেখে যায়।পঞ্চকোট প্রাসাদে ঢুকে প্রহরী ও প্রাসাদ রক্ষীদের হত্যা করে লুটপাট চালাতে শুরু করে,ধ্বংস করতে থাকে একে একে মন্দির সহ নানান ভাস্কর্য।সেই থেকে আজপর্যন্ত বাংলার বর্গী আক্রমনের শিকার অবহেলিত ধ্বংসস্তূপ হিসাবে রয়ে গেছে এই গড়পঞ্চকোট।
প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরুলিয়ার আদ্রার কাছে কাশীপুর রাজবাড়ির সেরেস্তায় চাকরি করতেন।এই জায়গা তার খুবই প্রিয় ছিল। চলতি এই কথাগুলোর সত্যতা কতটা জানিনা,তবে মাইকেল মুধুসুদনের লেখায় গড়পঞ্চকোট উঠে এসেছে বার বার।প্রকৃতির অপূর্ব শোভার মাঝে ইতিহাসের চাদরে মোড়া গড়পঞ্চকোট ইতিহাসপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী উভয়েরই ভালো লাগার একটি জায়গা হতেই পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.