10 Famous Rath Yatra in West Bengal-পশ্চিমবঙ্গের ১০টি বিখ্যাত রথযাত্রা
রথযাত্রার কথা মনে আসতেই সর্বপ্রথম আমাদের মনে আসে জগন্নাথধাম পুরীর কথা,সেই রথকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমের চিত্রও ভেসে ওঠে চোখে।তবে ওড়িশার প্রতিবেশী রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে নেই,এর বিভিন্ন জেলায় মহাসমারোহে পালন হয়ে থাকে রথ উৎসব।
Watch Full Video here :
১)মাহেশের রথ :-
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অন্যতম প্রাচীন রথযাত্রা হলো মাহেশের রথযাত্রা উৎসব,যা ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন ও বাংলার সর্ব প্রাচীন রথযাত্রা।১৩০০ সালে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন।সেই থেকে আজপর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর শহরের নিকটে মাহেশে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওজনে ১২৫ টন এই রথটির উচ্চতা ৫০ ফুট ও ৯ চূড়া বিশিষ্ট ১২টি লোহার চাকা এই রথের।এই রথযাত্রা দেখতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন।কথিত আছে, মাহেশের রথের চূড়ায় নাকি একটি নীলকণ্ঠ পাখি বসে থাকে এবং পুরীতে রথযাত্রা শুরু হলে সেই পাখি ওই চূড়া থেকে উড়ে যায় এবং তখন নাকি মাহেশে রথ চলতে শুরু করে। অদ্ভুতভাবে এই নীলকণ্ঠ পাখিটিকে শুধুমাত্র প্রধান পুরোহিতই দেখতে পান। এখন এখানে পুরনো রথ,প্রথমের সেই মন্দির এবং দেবদেবীর মূর্তি আজ আর নেই।তবে নতুন মন্দির সহ রথ এবং মূর্তি স্থাপন করেই এই উৎসব পালিত হয় মহাসমারোহে।রথের মেলা ও বসে জমজমাট।
২) গুপ্তিপাড়ার রথ :-
বাংলার রথযাত্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত রথযাত্রা হলো গুপ্তিপারার রথযাত্রা।১৭৪০ সালে মধুসুদানন্দ এই রথ উৎসব শুরু করেছিলেন।অন্য জায়গার মতো রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেব মাসীর বাড়ি যান,কিন্তু জগন্নাথ দেবের ৫২ টি লোভনীয় নিরামিষ পদের রান্নার প্রায় ৪০কুইন্টাল খাবারের ভান্ডার লুট হয়ে যায়,যা ভারতবর্ষে কোথাও হয়না,এই খাবার জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।পুরীর রথকে যেমন জগন্নাথ দেবের রথ বলা হয় গুপ্তি পাড়ার রথকে তেমন বৃন্দাবন জিউর রথ বলা হয়।এই রথটির উচ্চতা প্রায় ৩৬ ফুট এবং ১২ টি চাকা আছে।
৩) রাজবলহাটের রথ :-
পশ্চিমবঙ্গের রথযাত্রার মধ্যে আরও একটি বিখ্যাত রথযাত্রা হলো হুগলির জঙ্গিপাড়ার রাজবলহাটের রথযাত্রা।এখানকার রথে জগন্নাথ,বলরাম, ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহের পরিবর্তে রাধাকৃষ্ণ ও গৌর নিতাই বিরাজ করেন।১২ টি চাকার এই রথের একটি বিশেষ ব্যাপার হলো এই রথটি দড়ির বদলে লোহার শিকল এর সাহায্যে টানা হয়।
৪)মায়াপুরের ইসকনের রথ :-
রাধাকৃষ্ণের পীঠস্থান বলতে প্রথমেই মনে পড়ে মায়াপুরের কথা , এখানকার রথযাত্রার কথা। তবে এই মন্দির থেকে রথ বের হয় না, এই মন্দিরে জগন্নাথ ,বলরাম, সুভদ্রা আসেন রথে চড়ে। শোনা যায় আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজাপুরের এক স্থানীয় পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রথম এই রথযাত্রা শুরু করেন।ঠিক করা হয় রাজাপুর থেকে রথে করে দেবদেবীরা মায়াপুর যাবেন আবার ফিরে আসবেন রাজাপুরে।কিন্তু কিছুদিন পর থেকে এই উৎসব বন্ধ হয় যায় এবং মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়। একসময় মন্দিরও ধ্বংস হয়ে যায়, স্থানীয়দের মুখে শোনা যায় যে দেবদেবীর মূর্তি নাকি অক্ষত ছিল।রাজাপুর মায়াপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম,যে গ্রামের অধিকাংশ মানুষই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী।পরে ইসকন সোসাইটির হাতে এই রথযাত্রার ভার দেওয়া হয় এবং তারাই এই উৎসব পরিচালনা করে।
৫) মহিষাদলের রথ :-
পূর্ব মেদনীপুরের মহিষাদলের রথযাত্রা খুবই বিখ্যাত।১৭৭৬ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী জানকী দেবী এই উৎসব শুরু করেন।পাঁচতলা এই রথটির উচ্চতা প্রায় ৬০ফুট। সেই সময় এই রথের ১৭ টি চূড়া ছিল এবং চাকার উচ্চতা ছিল ৬ ফুট। তখন কার দিনেই রথটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ৬৪ হাজার টাকা।২০১৭ সালে এই রথটি পুনরায় নতুন ভাবে সাজানো হয় এবং তখন ২৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়।রথের দিন মহিষাদল রাজবাড়ির বর্তমান রাজা পালকি চড়ে এসে রথের দড়িতে প্রথম টান দিলে শুরু হয় রথ যাত্রা।এই রথ যাত্রার জন্য এখানে ১ মাস ধরে মেলা হয় । সেখানে বিভিন্ন শিল্পীরা আসেন করেন এবং হস্তশিল্প,খাওয়া দাওয়া সব মিলে একেবারে জমে ওঠে মহিষাদলের রথ যাত্রা।
৬) আমাদপুরের রথযাত্রা :-
বর্ধমান জেলার আমাদপুরের চৌধুরী পরিবারের রথযাত্রায় মেতে ওঠে সারা গ্রাম।মন্দিরে রাধামাধবের পুজোর পর তাঁকে রথে চাপিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার উৎসব। রথের চাকার মাটি দিয়ে সেদিনই পরিবারের দুর্গা বাড়িতে হয় কাঠামো পুজো।
৭) চন্দননগরের রথযাত্রা :-
চন্দন নগরের এই রথযাত্রা শুরু করেছিলেন ১৭৭৪ সালে লক্ষ্মীগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী যাদবেন্দ্র ঘোষ মহাশয়।এই রথ যদু বাবুর রথ বলেই বেশি পরিচিত।লক্ষ্মীগঞ্জ থেকে বেরিয়ে তালদাঙা অবধি চলে এই রথ।
৮)খিদিরপুরের রথযাত্রা :-
কলকাতার খিদিরপুরের জগন্নাথ মন্দিরে হয় পুরীর নিয়ম মেনেই নিত্য পুজো,মঙ্গলারতি,ভোগ নিবেদন।রথের দিনের সমস্ত অনুষ্ঠানও হয় নিয়ম মেনেই।রথ বের হয়ে যায় স্বভূমি অবধি।রথকে ঘিরে চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৯)কাঁঠালপাড়ার রথ :-
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জন্ম এই নৈহাটির কাঁঠাল পাড়ায়।এখানে রথটি চালু করেছিলেন বঙ্কিম চন্দ্রের দাদা শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় তাঁর মা দুর্গাসুন্দরী দেবীর নামে উৎসর্গ করে।কাঁঠাল পাড়ার রথের মেলা দেখতে হাজির হয় দূর দূরান্তের বহু মানুষ।
১০)গরলগাছার রথযাত্রা :-
ডানকুনির নিকট গরলগাছার মুখোপাধ্যায় বাবুদের বাড়ির রথ যাত্রাও দেখার মত। দুর্গা পুজোর মত রথের সমস্ত অনুষ্ঠানও হয় নিয়ম আচার মেনেই।বাবুদের বাড়ির এই রথের উৎসবে সামিল হয় এলাকার সকল মানুষ।
You may also read :
Darun Laglo
উত্তরমুছুন