আড়বালিয়া মাঠের বসু বাটির বনেদি দুর্গাপুজো | Gramer Pujo | Dhanyakuria Arbelia Jamidar Barir Pujo | Arbelia Mather Basu Barir Pujo
বাড়ি এবং পুজোর পত্তন :-আড়বালিয়া মাঠের বসু বাটির প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় রামেশ্বর বসু তিনি স্বর্গীয় রাঘবেন্দ্র বসুর জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন ৷ এই রাঘবেন্দ্র বসু আরবালিয়া পুরাতন বসু বাটিতে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন যা প্রায় ৩৭৫ বৎসর অতিক্রান্ত৷এই পূজা পুরাতন বসুবাটির পূজা নামে পরিচিত৷পিতার মৃত্যুর পর রামেশ্বর একান্নবর্তী পরিবার থেকে পৃথক হয়ে আড়বালিয়া চড়ক খোলা সংলগ্ন স্থানে বাটি নির্মাণ করেন এবং পরবর্তীতে নিজ আবাসে দুর্গাপূজা শুরু করেন ১১৮২ বঙ্গাব্দে যা প্রায় ৩০০ বছর অতিক্রান্ত৷এই পূজা অদ্যাপি মাঠের বাড়ি পূজা নামে অভিহিত৷ রামেশ্বর প্রচুর ভূষ্যাধিকারী এবং অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন৷ তার প্রতিষ্ঠিত এই বসু বাটি তিন মহল্লা বাড়ি এবং পাঁচ খিলানযুক্ত ঠাকুরদালান পরিবেষ্টিত প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত৷ দুর্গাপূজা ছাড়াও এই বাড়িতে কালী পূজা, সরস্বতী পূজা এবং বারো মাসের (ভাদ্র, কার্তিক, পৌষ ,চৈত্র) লক্ষী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়৷বাড়ির কূল দেবতা নারায়ণের শালগ্রাম শিলা স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িতে নিত্য সেবার মাধ্যমে পূজিত হয়৷বাড়ির বিভিন্ন পূজা, বিবাহ ,অন্নপ্রাশন প্রভৃতি শুভ অনুষ্ঠানে এবং দুর্গাপূজার সময়ে কূল দেবতা নারায়ন বাড়িতে আসেন৷ চড়কখোলার চড়ক উৎসবও বহু প্রাচীন ,বস্তুত এই চড়ক উৎসবের নিমিত্ত সুবিশাল মাঠটি চড়কখোলা নামে পরিচিত এবং বসুদের বাসভবনগুলি ভৌগোলিক ভাবে মাঠ দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় ক্রমে এটি 'মেঠো বাড়ি 'বা 'মাঠের বাড়ি' নামে খ্যাতি লাভ করেছে ৷
দুর্গাপূজার রীতি-নীতিঃ- রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়েই বসু বাড়ির দুর্গাপূজার শুভ সূচনা হয়।একটি নতুন বাঁশের খুঁটি ওই দিন ঠাকুরদালানে দেবী দুর্গার বেদীতে স্থাপন করে পূজা করা হয় এর কিছুদিন পরে বাইরের দালানে শুরু হয় দেবীপ্রতিমা নির্মাণের কাজ৷যে বাঁশের খুঁটিটি পুজো করা হয়েছিল রীতি অনুযায়ী তার কিছু অংশ দেবী দুর্গার দক্ষিণ পদ বা ডানপদ (যেটি সিংহের পৃষ্ঠে আসীন) নির্মাণে ব্যবহৃত হয়৷ প্রতিপদাদী কল্প অনুসারে এখানে দুর্গাপূজা শুরু হয় অর্থাৎ মহালয়ার পরদিন কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথিতে চন্ডীমণ্ডপে দেবীর মঙ্গল ঘট স্থাপন করা হয়, প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত সেখানেই চলে ঘটে অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডীর পূজা ৷ষষ্ঠীর সকালে বাড়ির কূল বধূগণ সন্তানদের মঙ্গল কামনায় চণ্ডী ঘরে ষষ্ঠীব্রত পালন করেন।ষষ্ঠীতে সায়ংকালে বোধন তলায় বিল্ব শাখায় দেবীর বোধন হয় এবং রাত্রে মূল দালানে হয় আমন্ত্রণ ও অধিবাস৷ সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানেও দেখা যায় বিশেষ বৈচিত্র আড়বালিয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে গঙ্গা অনেক দূর হওয়ায় সুদূর বারাকপুর থেকে ভ্যানে করে দুটি বড় ড্রামভর্তি গঙ্গাজল আসে মহালয়ার দিন ।সপ্তমীর পূর্বাহ্নে বসুবাড়ির শিউলি বিছানো আঙিনায় বিশাল একটি তাম্র পাত্রে শত সহস্র ধারায় উদাত্ত কণ্ঠে পুরোহিতের স্তব , স্তোত্রপাঠ ও ঢাক, কাঁসর- ঘন্টা সহযোগে সম্পন্ন হয় নবপত্রিকাবাসিনী দেবী দুর্গার মহাস্নান৷ এখানে শাক্ত রীতিতে এবং 'বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ 'অনুযায়ী দেবীর পূজা হয় তাই ষষ্ঠী থেকে মহানবমী পর্যন্ত একটি করে কুষ্মাণ্ড অর্থাৎ চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়৷নবমীর দিন পাঠাবলি হয় অতীতে এখানে মহিষ বলি হত কিন্তু কোনও একটি অজ্ঞাত কারণে প্রায় শতাধিক বছর আগে মহিষ বলি বন্ধ হয়ে যায়।তাই মহিষ বলির সেই খাঁড়াটি প্রতীকি হিসাবে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার কাঠামোর নিচে রেখে দেওয়া হয়৷ আগে বসু বাড়িতে সন্ধি পূজার সূচনা এবং শেষ জানান দিতে কামানের তোপধ্বনি করা হত, এখন সে প্রথা বন্ধ৷ সন্ধিপূজায় দেবীকে নিবেদন করা হয় ১০৮ টি পদ্ম ,দেবীর সম্মুখে বাইরের দালানে বাড়ির প্রতিটি সদস্যের হাতে প্রজ্জ্বলিত হয় ১০৮টি মঙ্গল প্রদীপ ৷ সন্ধি পূজাতেও এখানে বলিদান হয় ৷ মহানবমীর দিন দুপুরে দেবীর উদ্দেশ্যে ১০৮টি বেল পাতার হোম -যজ্ঞ হয় ৷বসু বাড়ির দুর্গাপূজায় সংকল্প হয় বসু পরিবারের প্রত্যেক কূলপতিদের নামে৷ অষ্টমীর দিন গ্রামের বহু মানুষ এখানে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসেন অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির পর হয় কল্যাণী পূজা সেখানে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের বহু মানুষ তাদের পরিবারের মঙ্গল কামনায় দেবীর কাছে পূজার ডালা সাজিয়ে নিবেদন করেন৷দেবীর ঘট স্থাপনের ক্ষেত্রেও এখানে একটি ব্যতিক্রম দেখা যায়৷সচরাচর বঙ্গদেশে দুর্গাপূজায় প্রতিমাস্থ দেবতায় পাঁচটি ঘট স্থাপিত হয় কিন্তু বসু বাড়িতে পাঁচটি ঘটের পরিবর্তে চারটি ঘট স্থাপন করা হয় সেগুলি হল দেবী দুর্গার ঘট বা দেবী ঘট, মঙ্গলচন্ডীর ঘট, বোধনের ঘট এবং সিদ্ধিদাতা গণেশের ঘট ৷দেবী লক্ষীর কোনও ঘট এখানে স্থাপন করা হয় না কারণ দশমী পূজান্তে এই সকল প্রতিমাস্থ দেবতার ঘট জলে বিসর্জিত হয় কিন্তু যেহেতু লক্ষ্মীকে এই বাড়িতে কন্যা রূপে বা স্ত্রীরূপে ভাবা হয় তাই লক্ষ্মীর কোন ঘট হয় না৷ বসু বাড়ির গৃহদেবতা এই মহালক্ষ্মী সারা বছর তার তিন তলার ঘরে অধিষ্ঠান করেন ,সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের পর মহালক্ষ্মী তার তিন তলার বাসস্থান থেকে নিচে ঠাকুর দালানে নেমে আসেন এবং নবপত্রিকার পাশে আলাদা চৌকি পেতে তাকে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং তিনিও চার দিন দালানে পুজিত হন তারপর দশমীর সকালে দেবীর দর্পণে বিসর্জনের পর মহালক্ষী পুনরায় তিন তলায় তার ঘরে ফিরে যান৷ এখানে প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত যথাক্রমে পঞ্চপচার ,দশপচার এবং ষোড়ষপচারে দেবীর পূজা হয়।
দেবী প্রতিমার বৈশিষ্ট্যঃ- বসু বাড়ির দুর্গা প্রতিমা একচালা অর্থাৎ কাঠামো আলাদা করা যায় না৷ শাল কাঠ এবং বাবলা কাঠ সহযোগে তৈরি ফ্রেম যা বহু পুরানো এবং তার উপর বাঁশের কাঠামো নির্মাণ করা হয়৷ প্রতি বছর বিসর্জনের কিছুদিন পর জল থেকে স্থানীয় জেলেরা এই কাঠামো তুলে এনে দালানে রাখে৷ দেবী প্রতিমার ছাঁচ ও উচ্চতা এবং কাঠামোর দৈর্ঘ্য -প্রস্থ কোনও অবস্থাতেই পরিবর্তিত হয় না৷ প্রতিমার গড়ন একেবারে সাবেকি ধাঁচের ৷ টানা চোখ , দেবী মূর্তি, ঈষৎ রাগী ও হাসি মিশ্রিত মুখের আদল তার৷ দেবীর গাত্রবর্ণ অতসী পুষ্পের ন্যায় হলুদ ৷ গণেশ এখানে রক্তাম্বর৷ দেবীর চাল চিত্রে যে পট দেখা যায় তাতে দক্ষযজ্ঞ ,দশমহাবিদ্যা ও মহাভার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.