কলকাতার বনেদি পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো - Kolkata Jagadhatri Puja - Top 10 Kolkata Bonedi Barir Jagadhatri Puja - Bonedi Pujo Parikrama
কলকাতার বনেদি পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো - Kolkata Jagadhatri Puja - Top 10 Kolkata Bonedi Barir Jagadhatri Puja - Ananya'r Sathe Bonedi Pujo Parikrama
কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।জগদ্ধাত্রী পুজো বলতেই কৃষ্ণনগর বা চন্দননগরের কথাই সবার প্রথম মনে আসে ঠিকই তবে প্রাণের শহর কলকাতাও কিন্তু এখন পিছিয়ে নেই।বারোয়ারী পুজো হোক বা বনেদি বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো,সংখ্যা নেহাত কম নয়।তবে বনেদি বাড়ির পুজোগুলো আমায় বড় টানে।বনেদি বাড়িগুলোর দুর্গাপুজোতো ঘুরেছি, এবছর সে বাড়িগুলোর জগদ্ধাত্রী পুজো দেখার সৌভাগ্যও হলো।
বটকৃষ্ণ পাল বাড়ির পুজো
এই পরিবারের পুজো ১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন।বর্তমানে দুই শরিকে বিভক্ত দুই বাড়িতেই হয় পুজো।যদিও রীতিনীতি সবই এক দুই শরিকী পুজোর।১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ৭৭নং বেনিয়াটোলা স্ট্রীটে বটকৃষ্ণ পাল জমি কিনে বৃহৎ বসত বাড়ি নির্মাণ করেন।বাড়িতে সুরম্য সুন্দর ঠাকুর দালানও তৈরি করেন।এখানেই ১৩০৭ বঙ্গাব্দে( ইং ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ) মহাসমারোহে মাতা জগদ্ধাত্রীর পুজো শুরু করেন। বাহন সিংহের ওপর দু পা মুড়ে বাবু হয়ে বসে থাকেন মা এবাড়িতে। মায়ের সঙ্গে থাকে চার সখী। মাতৃ প্রতিমার সাথে বাহনও নানান অলঙ্কারের সজ্জিত এই বাড়িতে।
জানবাজারে রাণী রাসমণির পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল প্রীতরাম দাসের হাত ধরে।একসময় বীরভূমের শিল্পীরা এসে মূর্তি গড়তেন ,তবে বর্তমান মাতৃ প্রতিমা আনা হয় কুমোরটুলি থেকেই।যখন এবাড়িতে পৌঁছালাম তখন কুমারী পুজো চলছে।সুন্দর কুমারীপূজা হয় এখানে।পুজোর ভোগে থাকে লুচি ,ভাজা,তরকারি, হরেকরকম মিষ্টান্ন।ঠাকুরদালানটাই অপূর্ব সুন্দর।ঠাকুরদালানকে ঘিরে চৌকাকারে বাড়িটি।বাড়িটির সেই অতীত প্রাচুর্যে আজ ভাঁটা পড়েছে কিন্তু পুজোর প্রাণশক্তিতে নেই কোনো অভাব।
পাথুরীঘাটা খেলাত চন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের বাড়ির পুজো এটি।পাথুরীঘাটা রাজবাড়ি বলতেও এটি।সিংহদুয়ার পেরিয়ে ভিতরে ঢুকেই তাক লেগে যাবার মতোই সুন্দর বাড়িটি।তেমনই সুন্দর ঠাকুর দালান।সোনালী রাঙতা মোড়া সিংহাসনে দেবী বিরাজ করেন।প্রতিমার পিছনের চালি মঠচৌড়ি অর্থাৎ তিন চালি।দেবীর বাহন ঘোটকাকৃতি সিংহ।পুজোতে লুচি মিষ্টি মন্ড ভোগের সঙ্গে থাকে চিনির মঠ।
নীলমণি দে ঠাকুরবাড়ির পুজো
কলকাতার বউবাজার এলাকার নীলমণি দে ঠাকুরবাড়ির পুজো প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো। নবমীর দিনই পরপর ৪ দিনের পুজো হয় পরপর।ধুনো পুড়োনো এ বাড়ির বিশেষ রীতি।ঠাকুরদালানটিও বেশ সুন্দর।শোলার সাজের সাবেক প্রতিমা।সুন্দর বাড়িটির সুন্দর ঠাকুরদালানে পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী জাঁকজমকপূর্ণভাবে।দশমীর দিন গৌর নিতাইয়ের বিশেষ পুজো উপলক্ষ্যে অন্ন ভোগ হয়।
ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ির পুজো
এই বাড়ির পুজো প্রায় ২০০ বছরেরও প্রাচীন পুজো।পুজো শুরু করেছিলেন রামদুলাল দে মহাশয়।নবমীর দিন সংকল্প করে তন্ত্র মেনে ত্রিসন্ধ্যা পুজো হয়।দেবী এখানে কাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠাত্রী।কুমারীপূজা,সন্ধিপূজা সবই হয় অত্যন্ত নিয়ম মেনে।প্রথম পুজোয় চাল কুমড়ো ও আখ বলি।দ্বিতীয় পুজোয় কুমারী পুজো এবং তৃতীয় পুজোয় সন্ধিক্ষণে ১০৮টি রুপোর প্রদীপ উৎসর্গ করা হয়।রামদুলাল নিবাসের দুর্গাপুজো হোক বা জগদ্ধাত্রী পুজো, আলাদা আবহ সৃষ্টি হয় যেন।
দূর্গাচরণ মিত্র বাড়ির পুজো
স্ট্রীটে এই বাড়ির পুজো বহু প্রাচীন।পুজো শুরু হয়েছিল ১৭৫২ সালে।এখানে পুজো হয় সাক্ত মতে,আগে বলি প্রথা চালু থাকলেও এখন আর সে প্রথা নেই। অন্যান্য বাড়িগুলোর থেকে এবাড়ির পুজো একটু আলাদা।এ বাড়ির পুজোয় কুমারী পুজো,শ্রী বরণডালা নেই।পরিবারের ইষ্ট দেবী বলে বেদীতে তীরকাঠি দিয়ে ঘেরা হয় না।মাএর মুখের রঙ ঠিক যেন শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের।অষ্টমীতে হোম এবাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অমৃতলাল দা বাড়ির পুজো
এ বছর ১৭৭ বছরে পা দিল এ বাড়ির পুজো।হেম কুটির বলেই এ বাড়িকে লোকে বেশি চেনে।বাঁকুড়া কোতোলপুর থেকে সুতানুটিতে চলে আসা সম্ভ্রান্ত গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের অমৃতলাল দা ছিলেন এই পরিবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তি।এখানে দেবীর বেদীর দুপাশে দুজন সখী ছাড়াও থাকে দুজন করে ঘোড়সওয়ার।পুজো ছাড়াও এবাড়ির ঠাকুরদালানের স্থাপত্য,একতলার নানা দেওয়াল জুড়ে আঁকা নকশা,রামকৃষ্ণ,সারদা মায়ের স্থাপিত মূর্তি বিশেষ নজরে পড়েছিল।
মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের এই চোরবাগান মৈত্র বাটির পুজো প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। এখানে দেবী মূর্তিটি বেশ অভিনব। মায়ের দুপাশে জয়া বিজয়া অধিষ্ঠান করে। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ ছিলেন বসিরহাটের অধরমনি গ্রামের মৈত্রবাগানের নিবাসী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.