Dhanyakuria Gaine House | UNESCO Heritage Dhanyakuria | Bonedi Barir Durga Pujo | Weekend Tours from Kolkata
Dhanyakuria Gaine House | UNESCO Heritage Dhanyakuria | History-Photoshoot-Bonedi Barir Durga Pujo-Weekend Tours from Kolkata
সাহেব বিবি গোলাম সিনেমাটা যখন দেখেছিলাম সিনেমাটার গল্পের সাথে সাথে শুটিংয়ের সেই বিশাল অট্টালিকাটাও কোথাও যেন মনে জায়গা করে নিয়েছিল।যদিও তখন জানতাম না কোথায় সেই অট্টালিকার খোঁজ।শুধু তাই কেনো ফরাসী সিনেমা "লা নুট বেঙ্গলী"র শুটিংও হয়েছিল যে বাড়িতে সেটাই গাইন বাড়ি।ধান্যকুড়িয়ার গাইনদের বসত বাড়ি।শুটিং বাড়ি বলেও পরিচিত এলাকায়।অপূর্বসুন্দর বাড়িটির পরিচর্যা, যেখানে বেশির ভাগ বাড়িই আজকাল পুরোনো গরিমা হারিয়ে ভগ্নপ্রায়,হাড় কঙ্কালসার সেখানে দাঁড়িয়ে L আকৃতির হালকা গোলাপি রঙের বাড়িটি সত্যি তাক লাগিয়ে দেবে।
Watch Full video of this house with exclusive interview of Mr Monjit Gaine :
প্রচ্ছদ ভালো হলে যেমন বইটি পড়ে দেখার প্রতি আগ্রহ জন্মায়,তেমনই বাইরের সৌন্দর্য্য এতটাই মনমুগ্ধকর যে পুরো বাড়িটির প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দিল মাত্রাতিরিক্ত।প্রাচ্য পাশ্চাত্য স্থাপত্য রীতির এক অদ্ভুত মেলবন্ধন।যেমন করনিথিয়ান পিলার গুলো পাশ্চাত্য স্থাপত্যশৈলীর কথা মনে করায় তেমনই প্রাচ্যের প্রতিনিধিত্ব করে বাড়ির মাথার গম্বুজগুলি।তথাকথিত রাজবাড়ি নয় কারণ সেই অর্থে রাজা ছিলেন না এনারা।ব্যাবসায়ী পরিবার,সেই সূত্রে সমাজে প্রতিষ্ঠা।প্রচুর অর্থ সমাগম।ইংরেজ শাসন তখন,ধান্যকুড়িয়ার বেশির ভাগই ছিল সুন্দরবনএর অংশ,জলাকীর্ণ,জঙ্গলময়।জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন।১৭৪২ খিস্টাব্দে জগন্নাথ দাস নামক জনৈক ব্যাবসায়ী প্রথম বসতি স্থাপন করেন।
পরবর্তীতে সাহু,গায়েন,বল্লভদের হাত ধরে গড়ে ওঠে এই গ্রাম।শ্রীবৃদ্ধি ঘটে ধান্যকুরড়িয়ার,বাংলার ইউরোপীয় ক্যাসলের গ্রামের।ছিল আঁখ,পাট ও গুড় এর ব্যাবসা।তবে এর মধ্যে প্রধান ছিল সোনালী পাটের ব্যাবসা।বাংলাদেশের সোনালী পাট রপ্তানী হত ইংল্যান্ডসহ বিদেশের নানান জায়গায়।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতো ব্যাবসা।সুদূর কলকাতা থেকে ইংরেজদের যাতায়াত ছিল এই গ্রামে।ছুটি কাটাতে আসতেন সাহেবরা।মহেন্দ্র নাথ গাইনের হাত ধরে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি গাইন পরিবারের। ওনাকে তৎকালীন জুট লর্ড বলা হত।তিনি ছিলেন 'Bengal Chamber of Commerce' এর পদাধিকারী।বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তাঁর পিতা গোবিন্দ চন্দ্র গাইন।সে প্রায় দুশো বছর আগের কথা।তিন মহলা এই বাড়িতে আছে মূল বাড়ি,পুরোনো বাড়ি ও নতুন বাড়ি।আছে ঠাকুর দালান তথা দুর্গা মণ্ডপ,বাগান চত্বরে রাসমঞ্চ,পারিবারিক কুলদেবটার মন্দির।বাড়িটিতে বর্তমানে বাস করেন শিক্ষক, বিশিষ্ট লেখক মনজিৎ গাইনের পরিবার।ওনার সাথে পরিচিতি সূত্রে দ্বিতল অট্টালিকার সর্বত্র ঘুরে দেখলাম বাড়ির সাথে জড়িত নানান গুল্প শুনতে শুনতে।ছাদটি ও যেমন প্রকাণ্ড তেমনই বনেদী আনায় পরিপূর্ণ।ছাদে উঠেই আরও একবার বিভিন্ন সিনেমা,সিরিয়ালের দৃশ্য গুলো ভেসে উঠলো,যে ছাদটির সাথে বিনোদনের দুনিয়ার সূত্রে বহু আগে থেকেই পরিচয় ছিল আজ সাক্ষাৎ হলো।বাড়িটি দিয়ে ঢোকার মুখেই বাগানে আছে একটি ত্রিতল মিনার।মনজিৎ গাইনের কথায়,ওনারা সেই অর্থে জমিদার ছিলেন না,তাই পাইক,বরকন্দাজ বা প্রহরীর ব্যাবস্থা ছিল না,সেই অর্থে এই মিনার ছিল নহবতখানা।উৎসব অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে চলত নহবতের আয়োজন।বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই নহবতখানাটি।তিনতলা এই মিনারের এক এক তলায় আছে হিন্দু,মুসলিম, খ্রিস্টান কারুকার্য,যা সেযুগেও মিশ্র ধর্মীয় রীতিকে ফুটিয়ে তোলে।বর্তমানে বাড়ির বেশিরভাগ সদস্যই শ্যাম বাজার নয় বিদেশে থাকলেও একসময় তিন মহলা বাড়িও ছোট হয়ে যেত সদস্য ভারে।আজও সদস্যরা উপস্থিত হন পুজোর কদিন।
জাকজমকপূর্ণ ভাবেই হয় পারিবারিক পুজো।সেরা বনেদী পুজোর সম্মানও আছে এনাদের ঝুলিতে।বাড়িতে দুর্গা পুজো চালু করেছিলেন গোবিন্দ চন্দ্র গাইন।পুজো হয় বৈষ্ণব মতে।অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ থেকে কনিষ্ঠ সবাই ১০৮ প্রদীপ জ্বালানো এ বাড়ির বিশেষ রীতি।বন্দুক বাজিয়ে শুরু হয় সন্ধি পুজো।নবমীর দিন বাড়ির মহিলাদের ধুনো পুরানো দেখার মত।রথের দিন কাঠামো পুজোর পর আরবেলের পাল মশাইরা বংশ পরম্পরায় ঠাকুর বানান।পারিবারিক প্রথা মেনে কাহার সম্প্রদায়ের কাঁধে চেপে হয় বিসর্জন।পুজোকে কেন্দ্র করে আগে বসত মেলা।রাস ধন্যকুড়িয়া মূল উৎসব। রাসের সময় তো বটেই এছাড়াও বৈশাখ মাসেও হয় এক বিশেষ রাস উৎসব।গাইনদের পারিবারিক মন্দির থেকে রাধা যান সেই রাস যাত্রায় সামিল হতে।কীর্তন,শোভাযাত্রা সহযোগে স্থানীয় মহিলারা উপস্থিত হন রাস মঞ্চে।মেলা বসে এক সপ্তাহব্যাপী।
সেই অতীত থেকে আজও,ইংরেজ আমল থেকে আজও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে এই গ্রাম।এই 'Village of Castle' এর টানে ছুটে আসতে হয়েছে হেরিটেজ কমিশনকেও।হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে গাইন ক্যাসল অর্থাৎ মহেন্দ্রনাথ গাইনের বানানো বাগান বাড়ি।তৎসহ মর্যাদা বৃদ্ধি পুরো গ্রামেরই।ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ছবি সত্যান্বেষীর শুটিং এই বাড়িতে।উত্তমকুমার,উৎপল দত্ত,গুরু দত্ত,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর কতনা দিন রাত কেটেছে এই বাড়িতে।বর্তমান বহু মেগা সিরিয়ালে ভেসে ওঠে এই বাড়ির নানান দৃশ্য।অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়েও গাইন বাড়ি এভাবেই যেনো নিজের গরিমাকে ধরে রাখতে পারে,স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে বাংলার ভিলেজে ক্যাসল এর অন্যতম ক্যাসল হিসাবে,তবে বইয়ের পাতায় নয় বাস্তবের মাটি আঁকড়ে।
Related Topics : Gobardanga Jamidar Bari, Dhanyakuria Gaine Castle, Garalgachaa Jamidar Bari, Serampore Rajbari
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.