Sonajhuri Haat-Khoai Mela-Baul Gaan-Santiniketan

Sonajhuri Haat-Khoai Mela-Baul Gaan-Santiniketan
আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে...
বহুশ্রুত ছোটবেলার স্মৃতি বিজড়িত কবিগুরুর এই ছোটো নদীর উৎপত্তিস্থল সেই শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতনের সাথে বাঙালির মনের টান অবিচ্ছিন্ন।সেই টানেই বসন্ত উৎসব হোক বা দুদিন ছুটি পেলেই বাঙ্গালী ছুটে যেতে চায় শান্তিনিকেতনে।আর বর্তমানে পর্যটকদের কাছে শান্তিনিকেতনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে সোনাঝুরির হাট বা খোয়াই মেলা। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ ছাড়িয়ে খোয়াইয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে একটা লেখা - 'খোয়াই বনের অন্য হাট'।যদিও এই হাট আর বনের হাট নেই শুধু,বনের জায়গা শেষ করেই এর পরিসর রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে কবেই।
Enjoy Sonajhuri Haat with shopping and all detailed information :
আগে এটি শনিবারের হাট বলেই শুরু হয়েছিল বছর কুড়ি আগে বনদপ্তরের জমিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে।মূলত মহিলারাই নিজেদের হাতের তৈরি নানা জিনিসের সম্ভার নিয়ে বসতেন সে হাটে। আগে শনিবার ছিল পূর্ণ হাট ও রবিবার ছিল ভাঙ্গা হাট।
বিগত কয়েক বছরে হাটের সে চেহারা গেছে বদলে।শুধু শনিবারই নয় সারা সপ্তাহ জুড়েই বসে এখন সে হাট।আর বনাঞ্চল ছাপিয়ে রাস্তার ওপর ও মাইলের পর মাইল বিস্তৃত সেই হাত।তবে শনিবার ও রবিবার জনসমুদ্রের ঢল নামে সে হাটে।ভিড় ও মেলা সংলগ্ন রাস্তায় যানজট সামলাতে প্রশাসনকে তটস্থ থাকতে হয় শনিবার।
কোপাই নদীর ধারে বসে এই হাট।খোয়াই একটি ভৌগলিক গঠন। 'ক্ষয়' শব্দ থেকে যার উৎপত্তি।এই খোয়াই অঞ্চলটি বায়ু ও জলের কারণে নিয়মিত ক্ষয়ের ফলে ক্ষুদ্র উপত্যকাগুলির এই ভৌগলিক গঠন।একদিকে শ্যামবতী খাল ও অন্যদিকে বীরভূমের লাল ল্যাটেরাইট মাটিতে গজিয়ে ওঠা সোনাঝুরি গাছের বন দ্বারা বেষ্টিত,পাশেই আঁকা বাঁকা কোপাই নদী।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ো প্রিয় স্থান ছিল এটি। প্রকৃতির টানে বারে বারেই ছুটে যেতেন এই খোয়াই এর ধারে। তাঁর অনেক সৃষ্টিতেও সেই ছোঁয়া পেয়েছি আমরা।তখন যদিও ছিল না আজকের সোনাঝুরির হাট।শুধু বিশ্বকবিই নন।তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ছোটো উপন্যাস 'হাঁসুল বাঁকের উপকথা' ও খোয়াই নদী দ্বারা অনুপ্রাণিত।
Related Posts : Surul Jamidar Bari ( 3 KM from here )
লাল মাটিতে উন্মুক্ত মেলা এটি।সাল,সেগুন,ইউক্যালিপটাস গাছ দ্বারা বেষ্টিত এই স্থান। সোনাঝুরি আক্ষরিক অর্থ স্বর্ণের ফোঁটা।শীতকালে সোনাঝুরি গাছের ছোটো ছোটো হলুদ ফুলগুলো যখন ঝড়ে পড়ে,পুরো বনে মনে হয় সোনার ঝর্না বয়ে যাচ্ছে।শান্তিনিকেতনের অতীত ঐতিহ্যের পাশাপাশি নতুনত্বের সাথে বিনোদন সবই পাবেন এই হাটে। প্রকৃতির খোলা আকাশের নিচে কেনাকাটা করতে যেমন ভালো লাগবে তেমনি এই হাটের অন্যতম আকর্ষণ বলতে পারেন বাউল গান।একতারা সহযোগে বাউল গান 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়' বা উদাত্ত কণ্ঠে 'মিলন হবে কত দিনে,আমার মনের মানুষের সনে...' নেই কৃত্তিমতা নেই বাজনার আড়ম্বর।আছে শুধু মাটির টান,সংস্কৃতির ছোঁয়া।জায়গায় জায়গায় বাউলদের দল,পাশেই সাঁওতালি উপজাতিদের লোকনৃত্য এ যেন প্রকৃতির বুকে লোক সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন জায়গায় জায়গায় এই সাঁওতালি উপজাতির মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে সুন্দর পোশাক পরে মাথায় কলসি নিয়ে, আর পুরুষরা ধামসা মাদল বাজিয়ে পরিবেশন করেন স্থানীয় নৃত্য।আপনিও যোগ দিতে পারেন সেই দলে।নাচ জানা থাক বা না থাক হাতে হাত ধরে ছন্দে ছন্দে পা মেলানোর যে আনন্দ তা অবর্ণনীয়। আর একটি বিষয় না বললেই নয় তাদের আন্তরিকতা। নিজস্ব কোনো দাবী নেই তাদের তবে সকাল থেকে বিকেল অবধি তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমই তাদের জীবিকা।খুশি হয়ে যাই দেবেন খুশি তারা,আবদার জানায় তাদের নিয়ে সেলফি তোলার।

কেনাকাটার মূল আকর্ষণ হিসাবে পাবেন বাটিক স্টাইলের চাদর,ব্লাউজ পিস থেকে বিবিধ জিনিস,কুর্তা,শার্ট,পাঞ্জাবি,প্লাযো,কাঁথাস্তিচের কাজ,নকশীকাঁথা,ব্যাগ,পার্স,হস্তশিল্প,কাপড়ের গয়না,পিঠেপুলি ও আরও নানাবিধ জিনিস।প্রতিটি জিনিসই বেশ সস্তা ও পছন্দসই।হাটের টানেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ হাজির হয় এই হাটে।রাত্রি যাপন বা দিনে গিয়ে দিনে ফেরা সবই চলে এই হাটকে কেন্দ্র করে।
খোলার সময়: সকাল দশটা থেকে সূর্যাস্ত অবধি চলে এই মেলা,চলে ক্রেতা বিক্রেতার লেনদেন।
হাটের কাছে কোথায় খাবেন?
হাট সংলগ্ন শকুন্তলা বা রামশ্যাম এ দ্বিপ্রহরের আহার সেরে নিতেই পারেন। বনের মাঝে এই হোটেল গুলোও বজায় রেখেছে গ্রাম্য লোকসংস্কৃতি, মাটির বাড়ির আদলে সাজিয়েছে নিজেদের।খাবার পরিবেশনাও পঞ্চব্যাঞ্জন সহযোগে মাটির থালা,গ্লাস,বাটিতে।
হাটে কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে গণদেবতা এক্সপ্রেস, হাওড়া-সিউড়ি ইন্টারসিটি, সরাইঘাট, রামপুরহাট এক্সপ্রেসে বোলপুর স্টেশন। প্রান্তিক স্টেশনেও নামতে পারেন। স্টেশন থেকেই টোটো পাওয়া যাবে। আস্তে পারেন বোলপুর গামী যেকোনো বাসেও।এছাড়া অনায়াসেই চলে আস্তে পারেন নিজের গাড়িটিকে সঙ্গে নিয়ে গুগল ম্যাপের সহায়তায় সোনা ঝুরির হাটে তথা খোয়াই মেলায়।
হাটের কাছে কোথায় থাকবেন?
1) সোনাঝুরি অতিথি নিবাস (9635200496, 8972726167),
2) রাম শ্যাম (7076319664, 9475032810, 8371828780)
3) শকুন্তলা ভিলেজ রিসর্ট (8116994188, 9232637439)
Related Posts : Surul Jamidar Bari ( 3 KM from here )
খুব সুন্দর হয়েছে লেখা টি
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুন