Surul Sarkar Jamidar Bari-Santiniketan

Surul Sarkar Jamidar Bari-Surul Boro Torof-Surul Rajbari
শান্তিনিকেতনের সাথে বাঙালির প্রাণের টান।তাই হয়তো ছুটি পেলেই বাঙ্গালী ছুটে যেতে চায় লালমাটির দেশে কবিগুরুর পরম শান্তির আশ্রয় স্থলে।শান্তিনিকেতন এর ভালোলাগার সাথে জড়িত অনেক জিনিসের মাঝে আবিষ্কার করেছিলাম সুরুল সরকার বাড়িটিকে।যে বাড়ির সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল বেশ হৃদ্যতা। বিশ্ব ভারতী গড়ে ওঠার সময়ও যে বাড়ির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।শান্তিনিকেতনের অনতিদূরেই এই সুরুল সরকার বাড়ি অবস্থিত।আমরা তো বারেবারেই শান্তিনিকেতন যাই।
Experience Surul Sarkar Jamidar Bari with detailed history -
বিশ্বভারতী,খোয়াই,সোনাঝুরি,কঙ্কালীতলার পাশে পাশেই এই জমিদার বাড়িও কিন্তু দ্রষ্টব্য হয়ে উঠতেই পারে আমাদের।

সুরুল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমার একটি গ্রাম।সুরুল্ অধিবাসীরা প্রথমদিকে ছিলেন বাগদি,বাউড়ি, হাড়ি ও ডোম বর্ণভুক্ত।আজ যদিও কালের স্রোতে ভেসে মিশ্র বর্ণের মানুষ বসবাস করেন এই অঞ্চলে।বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা বংশের আদি পুরুষ ভারত চন্দ্র সরকার মহাশয়।পরে ব্রজবল্লভের তৃতীয় পুত্র শ্রীনিবাস সরকারের হাত ধরে পুজোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল।পরবর্তীতে মন্দির স্থাপন করেন শ্রীনিবাস সরকার মহাশয়।ঠাকুর পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক ছিল বরাবর।সুরুল্ কুঠিতে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গান ও কবিতা রচনা করেছিলেন।এসেছেন বহু মহান ব্যাক্তিত্ব বারবার এই বাড়িতে।এই সরকার পরিবারেরই শান্তিনিকেতনের জমি কিনেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গা পুজো হয় এই বাড়িতে।পূজো শুরু করেন ভরতচন্দ্র সরকার।রমরমিয়ে ২৮৬ বছর পূর্ণ করলো এই পুজো।বাড়ি সেজে ওঠে ইলেকট্রিক বাল্ব নয়, রেড়ির তেলের প্রদীপে।পুজোর সময় বসে যাত্রার আসর।নাটমন্দির এর নিচের তলার ঘরগুলি তখন খুলে দেয়া হয় যাত্রা কর্মীদের উদ্দেশ্যে।দূর দূরান্ত থেকে অগণিত মানুষ এসে হাজির হন।বাড়ির সামনে রাস্তা সংলগ্ন অংশে বসে মেলা।বাড়ির মেয়েরা আজও উপরে চিকের আড়াল থেকে উপভোগ করে সেই যাত্রা পালা।বাড়ির মেয়েরা আজও উপরে চিকের আড়াল থেকে উপভোগ করে সেই যাত্রা পালা।
Related Posts : Itachuna Rajbari, Mahishadal Rajbari, Bawali Rajbari , Gobardanga Jamidar Bari , Sonajhuri Haat
পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, সামনে থামযুক্ত নাটমন্দির, নানারঙের কাঁচের ফানুস আর বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি মনে করিয়ে দেয় সাবেকি ঐতিহ্য আর রাজকীয় জৌলুষের কথা।ইতিহাস বলে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে বর্ধমানের নীলপুর অঞ্চল থেকে সুরুলে এসেছিলেন ভরতচন্দ্র ঘোষ । তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি সরকারের হাত ধরেই এই পরিবারের সমৃদ্ধির সূচনা।অতীতে সুরুল গ্রামটি ছিল এই পরিবারের বানিজ্যকেন্দ্র মাত্র। ভরতচন্দ্রের কোনো পুত্র না থাকায় তিঁনি তাঁর গুরুদেবের শরণাপন্ন হওয়ায় গুরুর আশীর্বাদে সন্তান লাভ করেন। এতে তাঁর বিশ্বাস জন্মায় এই সুরুল গ্রামটি অত্যন্ত পয়া। সেই থেকেই এই পরিবারের এখানে স্থায়ী বসবাস শুরু।

এই পরিবারের মূল আয় ছিল নীল চাষ থেকে। এছাড়াও গড়া কাপড় (মোটা থান) এবং চিনির ব্যবসাও ছিল।১৭৮২ খ্রীঃ সুরুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম রেসিডেন্ট জন চিফ।সেই সময় এই অঞ্চলে ছিল চিনির কারখানা।সেই সূত্রে বীরভূমের ইলামবাজারের সাহেব ঘাটে এসে ভিড়ত ব্রিটিশ ও ফরাসী জাহাজ।সেই সময়ই সুরুলের সরকার পরিবারের প্রাণপুরুষ ভরতচন্দ্ সরকার মতান্তরে শ্রীনিবাস সরকার শুরু করলেন ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে জাহাজের পালের ব্যাবসা। এক কালে এই পরিবার জিনসের কাপড়ও তৈয়ারি করত যা সেই সময়ে ব্যবহৃত হত জাহাজের পালে।কিছুদিনের মধ্যেই ভাগ্যলক্ষী সুপ্রসন্ন হলেন,ব্যাবসা ফুলে ফেঁপে উঠলো।এর ফলে তিঁনি প্রভূত ভূ-সম্পত্তি ও অর্থের অধিকারী হয়ে ওঠেন।
বর্ধমানের নীলপুর অঞ্চল থেকে সুরুলে এসেছিলেন ভরতচন্দ্র ঘোষ । তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি সরকারের হাত ধরেই এই পরিবারের সমৃদ্ধির সূচনা। কৃষ্ণহরি সরকারের ৩ পুত্র যাদবেন্দ্র, মাধবেন্দ্র ও কালিচরন।পরে সম্পত্তি ভাগাভাগির পরে যাদবেন্দ্র সরকার বড়বাড়ির উত্তরাধিকার,মাধবেন্দ্র সরকার ছোটবাড়ির উত্তরাধিকার হয়েছিলেন ও কালিচরন সরকার বড় দাদা মানে যাদবেন্দ্র সরকারের সাথেই থাকেন। যাদবেন্দ্র সরকারের ২ ছেলে ব্রজবল্লভ ও রাজবল্লভ।ব্রজবল্লভের ৫ পুত্র বৈদ্যনাথ, রামনারায়ণ, শ্রীনিবাস, লক্ষীকান্ত ও গুরুচরন। আর রাজবল্লভের ১ পুত্র নফরচন্দ্র,পরে ব্রজবল্লভের তৃতীয় পুত্র শ্রীনিবাস সরকারের হাত ধরে পুজোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল।

নাট মন্দির পেরিয়ে বাড়ির অন্দর মহলে প্রবেশ করলে দেখা যায় বাড়ির কুলদেবতা নারায়ণ মন্দির।দোতলা এই মন্দির গৃহের দোতলায় ঠাকুরের বাস।নিত্য পুজো হয় এই মন্দিরে।দুর্গা পুজোর কদিন এই কুল দেবতা নারায়ণ মন্দির থেকে বেরিয়ে সামিল হন নাটমন্দির,দুর্গা দালানে। বাড়িরপিছনের অংশে রয়েছে সরকার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মদের বাসভবন।রয়েছে পুরোনো জমিদার বাড়ি।আজ যদিও তা ভগ্নপ্রায়,জরাজীর্ণ।গাছ গাছালি বাসা বেঁধেছে তার বুকের ওপর।একসময় নাটমন্দির এর আদলেই তৈরি হয়েছিল এই বাড়ি।পুরোনো এই বাড়িতেই এক অংশে অতীতকে সাক্ষী করে আজও বসবাস করেন কিছু উত্তরসূরী।আছে নিজস্ব বহু পুকুর,জমি,আছে ইন্দু ভবন।ইন্দু ভবনের স্থাপত্য,সৌন্দর্য্য আজও মুগ্ধ করবে।স্মরণ করবে অতীত ঐতিহ্য ও গরিমাকে।এই জমিদার বাড়ি বহু সময়েই আমাদের চোখের সামনে ধরা দিয়েছে বহু সিনেমায়,সিরিয়ালে।

সুরুল্ আসার অন্যতম আকর্ষণ সুরুল্ জমিদার বাড়ীর শুধু নয় আছে বাড়ি সংলগ্ন টেরাকোটা মন্দির।বীরভূম জেলার টেরাকোটা মন্দিরগুলোর মধ্যে সুরুলের এই মন্দির গুলো অন্যতম।আছে লক্ষ্মী জনার্দন পঞ্চরত্ন মন্দির, শিব মন্দির। আর প্রতিটি মন্দিরেই রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্র,দৃশ্যাবলী টেরাকোটা শিল্পের মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।খোদিত আছে একসময় ব্যাবসা বাণিজ্য চালানো ইউরোপীয়দের নানান ছবিও।সুরুল্ জমিদার বাড়ির সব অংশের চাকচিক্য,জৌলুস আগের মতই না থাকলেও নাটমন্দির কে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে খুবই যথাযথ ভাবে।সাদা,লাল,সবুজ রঙের ছোঁয়ায় সেজে ওঠা এই সুরুল সরকার জমিদার বাড়ির নাট মন্দির মন ছুঁয়ে যাবে।তার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করবে অতীত ঐতিহ্যকে।

কিভাবে যাবেন : বোলপুর বা প্রান্তিক স্টেশন থেকে টোটো তে আসতে পারেন। দূরত্ব ৩-৪ কিমি। গাড়ি নিয়ে গেলে গুগল ম্যাপ দেখে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন সুরুল জমিদার বাড়ি।
গুগল ম্যাপ :
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এই জমিদার পরিবারেরই বংশধর বিশ্বজিৎ সরকার ও অভিনব সরকার।
Related Posts : Itachuna Rajbari, Mahishadal Rajbari, Bawali Rajbari , Gobardanga Jamidar Bari, Sonajhuri Haat
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.