Bawali Rajbari-Royal Heritage Stay-Booking Tariff Food
Bawali Rajbari-Royal Heritage Stay-Booking Tariff Food
ফিরে গেলাম ৩০০ বছর আগে।দোতলার গোটা বারান্দা জুড়েই খানিকটা নেমে এসেছে কাপড়ের কুচি আবরণ স্বরূপ,সেই দিকে চোখ পড়তেই যেনো ভেসে উঠলো নানান দৃশ্য,ওই বুঝি প্রবীণ জমিদার আরাম কেদারায় বসে গড়গড়া টানছেন,পাশে গিন্নিমা পান সাজছেন আর পায়ের কাছে বসে তার বিশ্বস্ত চাকর।অন্যদিকে অন্দরমহলে কেউ পাখিকে খেতে দিচ্ছেন তো কেউ বা আলতা পড়ছেন।বাড়িময় লোকজনের হাঁটাহাঁটি,দোতলায় খড়খড়ি, চীকের আড়াল থেকে মেয়ে বউদের নিচে উঁকিঝুঁকি।কল্পনা হলেও ওই মুহূর্তে ওই বাড়িতে দাঁড়িয়ে এই অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
জমিদারি প্রথা শেষ হয়ে গেলেও কোথাও কোথাও তার ছাপ থেকে যায় সুস্পষ্ট।আর ভাগ্যিস আছে তাই অতীতকে আমরা বর্তমানে দাঁড়িয়েও দেখতে পাই।ছোটবেলা থেকেই এই বাড়িগুলোর প্রতি আমার ভালোলাগা ছিল একটু বেশিমাত্রায়।এই ভালো লাগাকে পাথেয় করে গেছি এমন অনেক বাড়ি আর তাদের মধ্যে অন্যতম এই বাওয়ালি রাজবাড়ি। যা ছিল কালকের মন্ডল ম্যানসন তা আজকের বাওয়ালি রাজবাড়ি।প্রাচীন বাড়িগুলোতেও কিভাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে আধুনিকতাকে প্রবেশ করানো যায় তাও জমিদারি আভিজাত্যকে বজায় রেখে সেটা ওখানে না থাকলে হয়তো বোঝা সম্ভব হতো না।
Experience Royal Heritage Stay with food and plans here :
সুউচ্চ গোলাকার থামের ওপর আয়তাকার প্রকান্ড রাজবাড়ি। ঋতুপর্ণ ঘোষ থেকে সত্যজিৎ রায়, আর হালের বুলবুল সিনেমার শুটিং স্পট বলে বিখ্যাত এই রাজবাড়ি।ঘর বুক করার সাথে সাথেই বুক করে রেখেছিলাম দুপুরের জমিদার থালি,যা সত্যিই পরিবেশন করা হয় রাজকীয়ভাবেই।চুন-সুরকির দেয়াল,করিবর্গার ছাদ, শ্বেত শুভ্র সুউচ্চ পালঙ্ক,দেয়াল জুড়ে সাদা কালো ছবি,তোরঙ্গ,জানলায় খড়খড়ি দিয়ে ঘরগুলি সাজানো।ঘর ও বাড়ির অনত্র সব জায়গাতেই আলোর ব্যাবহারের ক্ষেত্রেও প্রাচীনত্বের ছোঁয়া।পুকুরে খেলে বেড়ায় রাজহাঁসের দল।কোথাও প্রাকৃতিক ভাবে পুকুর তো কোথাও কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্টি করা সুইমিং পুল,স্পা।একই রাজবাড়ি চত্বরে কি সুন্দর ভাবে অধিষ্ঠান করছে পুরাতন ও নতুন পাশাপাশি।থাকার ঘর ছাড়াও আছে নানান কাজে ব্যবহৃত বহু ঘর।মনোরঞ্জনের জন্য পাবেন বিলিয়ার্ড,কেরাম,লাইভ মিউজিক।।সকলের নিস্তব্ধতায় বা রাতের আঁধারে চলে যেতে পারেন প্রকান্ড ছাদে। হেঁটে বেড়াতে পারেন বাগান চত্বরে।প্রকান্ড ছাদে আছে একটি রেস্তোরাঁও।দিনের আলো শেষ হতেই রাজবাড়ি সেজে ওঠে রাতের আলোয়।তবে প্রদীপ, ঝাড় লন্ঠন,হেজাক, মশালের আলোয়।আলো আঁধারিতে এক মায়াবী রূপ।শহুরে মানুষ হবার সুবাদে এই আলোতে থাকার অভিজ্ঞতাও উপভোগ করার মতোই।সন্ধেবেলা রাজবাড়ির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হয় নানান অনুষ্ঠান।সান্ধ্য কালীন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল এই বাড়ির সাথে জড়িত প্রবীণ মহাশয় এর বক্তব্যের মাধ্যমে।অনুষ্ঠান শেষে তার সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে এই বাড়ির অতীতের নানান কথা।উনিই বলেন,তাদের পূর্বপুরুষদের সাথে যোগাযোগ ছিল জয়পুরের রাজা সোয়াই মানসিং ও তার সাহসী আর্মি সভারাম রায়ের।সয়াই মানসিংহ ছিলেন আকবরের কমান্ডার ইন চিফ।বাওয়ালি রাজবাড়ি গড়ে ওঠার আগে এই জায়গা ছিল বৃহত্তর সুন্দরবন অঞ্চলের অর্ন্তগত।স্থানীয় বাসিন্দারা পূজো করতেন বনবিবি ও দক্ষিণ রায়ের।সকল স্থানের নামকরণের পিছনেই একটা কারণ থাকে,সেই কথা ভেবেই ওনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে বাওয়ালি নামকরণের তাৎপর্য কি?সেই প্রবীণ ভদ্রলোকের সদত্তুরে জানতে পারি বাউলিয়া অর্থাৎ বাউলিয়া সম্প্রদায়ের স্থানীয় লোকের বুসবাসই এই অঞ্চলকে বাওয়ালি বলে চিহ্নিত করে।
Related Posts : Itachuna Rajbari, Mahishadal Rajbari, Surul Jamidar Bari, Gobardanga Jamidar Bari
বজবজ নিকটবর্তী এই বাওয়ালি রাজবাড়ি।রাজবাড়ি বললেও আসলে এটি জমিদার বাড়ি।মন্ডলদের জমিদারি এই বাওয়ালি।আসল পদবী ছিল রায়।বংশের পূর্বপুরুষ শোভারাম এই মন্ডল উপাধি পান।হিজলির রাজার থেকে উপহারস্বরূপ ৫০ টি গ্রামের জমিদারির স্বত্ত্ব পান শোভারামের পৌত্র রাজারাম।১৭১০ এর আশেপাশে তারা বাওয়ালিতে বসবাস শুরু করেন।বসবাস কালীন তারা এই অঞ্চল জুড়ে গড়ে তোলেন প্রচুর মন্দির,এই পরিবার ছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজারী।রাজবাড়ির অনতিদূরে তারা তৈরি করেছিলেন রাধাকান্ত জিউ এর মন্দির,
গ্রীষ্ম কালীন জলবাংলো - জল টুঙ্গী।এই বাড়িতে আজও হয় দুর্গাপুজো।সাথে সাথে দীপাবলিতে হয় মহা সমারোহ।সাথে হয় লক্ষ্মী পুজো।বাড়ির বহিরঙ্গের সৌন্দর্য্যকে একই রেখে মন্ডলদের বসতবাড়ি সংস্কার করে হেরিটেজ রিসর্ট গড়ে তোলেন কলকাতার স্বনামধন্য অজয় রাওলা মহাশয়।রাজবাড়ি চত্বর প্রায় সাড়ে তিন একর জমির ওপর ছড়ানো।বাড়ির প্রায় ২৫ টি ঘরে আছে থাকার ব্যাবস্থা।কোনটি ক্লাসিক হেরিটেজ,কোনোটি জমিদারি সুট তো কোনোটি রয়াল সুট।আছে অজয় রাওলা মহাশয়ের নিজস্ব একটি ঘর।শুধু অন্দরমহলেই নয় বাগান ও পুকুর সংলগ্ন এলাকাতেও আছে থাকার সুব্যবস্থা নতুন বাড়ি,ছোটো বাড়ি,ডাক বাংলো তাদের মধ্যে অন্যতম।বাড়ির নানান অংশে ছড়িয়ে আছে রয়েল ডাইনিং রুম,সংগ্রহশালা,বসার ঘর,পিয়ানো রুম, লাইব্রেরী,লোটাস প্যাভিলিয়ন(বর্তমানে এটি ডাইনিং এরিয়া)।একতলা হোক বা দোতলা,টানা বারান্দা জুড়ে রয়েছে পুরোনো দিনের আসবাব,টেলিফোন,গ্রামোফোন যা হাঁটার সাথে সাথে পায়ে পায়ে পিছিয়ে নিয়ে যাবে জমিদারি যুগে। রাজবাড়ি থেকে বেরিয়েই মন্দির।যদিও সেগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।কয়েকটিতে কাজ ও চলছে।শুধু আবাহন নয়,বিদায় বেলাতেও কতৃপক্ষর আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো।ঢাকের বাজনা, শাঁখে র আওয়াজ, বরণের মাধ্যমে যেমন জানানো হয়েছিল আবাহন তেমনি বিদায় বেলাতেও প্রদীপের উত্তাপ সহযোগে নারকেল নাড়ুর মিষ্টত্য দিয়ে জানালো বিদায়। যেনো এই দুদিনের স্মৃতিকে আরও মধুর করে তুললো তারা।
একরাশ ভালোলাগা,অভিনব অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম,যা স্মৃতির মণিকোঠায় সঞ্চিত রাখবো সারাজীবন।
পথ নির্দেশ - বজবজ নিকটবর্তী এই বাওয়ালি রাজবাড়ি।আস্তে পারেন নিজের গাড়ি বা ভাড়া করা গাড়িতেও। নিকটবর্তী স্টেশন বজবজ।সেখান থেকে অটো কিংবা বাসেও আস্তে পারেন।
গুগল ম্যাপ :
বুকিং করার নম্বর: ফোনেই বুক করতে পারেন 9073312000, 9057514782
চেক ইন চেক আউট টাইম : দুপুর ২টোয় চেকইন ও পরের দিন ১২টায় চেকআউট টাইম।
থাকার খরচ: আলাদা আলাদা ঘরের ভাড়াও আলাদা।তাও গড়ে ঘর পিছু খরচ ৭,০০০টাকা থেকে ১৫০০০ টাকা।খাবার খরচ আলাদা।জমিদারি থালি ১৫০০ টাকা।
ডে ট্যুর উইথ লাঞ্চ ১৭০০ টাকা, ডে ট্যুর উইথ লাঞ্চ + ইভনিং টি, স্নাক্স ২০০০ টাকা
Related Posts : Itachuna Rajbari, Mahishadal Rajbari, Surul Jamidar Bari, Gobardanga Jamidar Bari
ভালো লাগলো ❣️
উত্তরমুছুন