Bonedi Barir Durga Puja Parikrama-Hooghly Bonedi Barir Puja-Gramer Pujo-Jamidar Barir Pujo
দুর্গাপুজো মানেই আবেগ।ছোটবেলা থেকেই পুজোর নতুন পোশাক গায়ে চাপিয়ে ঠাকুর দেখতে আমার ভালো লাগে।আজ ছোট নেই কিন্তু সেই অভ্যাস আজও একই।যদিও ভিড় কোলাহল কম হলে পুজোর সাথে একাত্ম হওয়া যায় অনেক বেশি।সেই উদ্দেশ্যেই সপ্তমীর দিন বেরিয়ে পড়লাম কোলাহল থেকে দূরে হুগলির কিছু বনেদি পুজো দেখতে।
শ্রীরামপুর রাজবাড়ি দিয়ে ঠাকুর দেখা শুরু করলাম।এর আগেও বহুবার শ্রীরামপুরে এসেছি,এই বাড়িতেও এসেছি অনেকবারই তবে ঢাক বাজলে বাড়িগুলো আলাদা মহিমা পায়।৩৩৮ বছরের পুরোনো পুজো।ঠাকুর দালানে বেশ কিছুক্ষন পুজো দেখে বাল্যভোগের পর রওনা হলাম শ্রীরামপুর দে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
শ্রীরামপুর দে বাড়ির পুজোও বহু প্রাচীন পুজো।ডেনিশ কলোনি ছিল যখন শ্রীরামপুর তখন এই পুজো দেখতে আসতেন উইলিয়াম কেরি প্রমুখরা।রামচন্দ্র দে যে পুজোর শুরু করেছিলেন তা আজও বহমান।দে বাড়ির মূল আকর্ষণ বিজয়া দশমীর দিন মায়ের বরণ।ঠাকুরদালান থেকে মা কে নামিয়ে আনা হয় উঠোনে।তারপর মা কে ঘিরে বাড়ির মেয়ে বউরা প্রদক্ষিণ করে স্ত্রী আচার পালন করেন।এই অনুষ্ঠান দেখতে হাজির হন দূর দূরান্তের বহু মানুষ।
শেওড়াফুলি রাজবাড়ি।প্রায় ২৮৮ বছরের প্রাচীন পুজো এই শেওরাফুলি রাজবাড়িতে,যা শুরু করেছিলেন রাজা মনোহর রায়। বাড়ির নিকট পুকুরে স্বপ্নাদেশ পাওয়া অষ্টধাতু থেকে নির্মাণ করা হয় মা সর্ব মঙ্গলার বিগ্রহ। প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে নিত্য পুজো হয়।দুর্গা পুজো হয় কালিকা পুরাণ অনুসারে।মা এর সাথে লক্ষী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী নেই আর মা এর বাহন ঘোড়া।
এরপর চলে এলাম ডানকুনির নিকট গরলগাছা বাবুদের বাড়িতে।সকাল গড়িয়ে তখন দুপুর।১৭৬৯ সাল থেকে শুরু এ পুজোর।সাধক রামপ্রসাদ,রামকৃষ্ণ এই বাড়ির পুজোয় এসেছেন বহুবার।ঠাকুরের মূর্তি সহ ঠাকুর দালানটি অপূর্ব সুন্দর।এই বাড়ির কর্তা মশায়ের সাথে পরিচয় সূত্রে ভোগের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে রওনা হলাম জনাই এর উদ্দেশ্যে।
জনাইতে পর পর অনেকগুলো বাড়ির পুজো। যার মধ্যে অন্যতম কালীবাবুর বাড়ির পুজো।৩০০ বছরেও প্রাচীন পুজো।জনাই রাজবাড়িই আসলে কালী বাবুর বাড়ি।কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান।বাড়িটির অবস্থা ভগ্নপ্রায়।তবে পুজোর সময় খানিকটা সারিয়ে রঙ করে নেওয়া হয় বলেই মনে হলো।তবে সেদিনের সবকটি বাড়ির মধ্যে মন কেড়েছিল কালীবাবুর বাড়িতে বাজা সানাইয়ের আওয়াজ।
হাঁটাপথেই পর পর অলিতে গলিতে আছে পুরাতন বাড়ির পুজো,মাঝের বাড়ি,গাঙ্গুলি বাড়ির পুজো, কত্তা বাড়ি,বাজার বাড়ি।উমা ভিলাই লোক মুখে বাজার বাড়ি বলে পরিচিত।লাল বাড়িও বলে কেউ কেউ।ঠাকুর দালান,ঝাড়বাতি ও প্রতিমা নজর কাড়ার মতোই সুন্দর।
জনাই এর পাশেই বাকসা গ্রাম।পুকুর,গাছ গাছালির মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে পৌঁছে গেলাম বাকসার মিত্র বাড়িতে।বাড়ির সামনেই দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে রঘুনাথ জিউ এর মন্দির।পথেই পড়বে মিত্র বাড়িরই তৈরি দ্বাদশ শিব মন্দির।বাকসার সিংহ বাড়ি ভগ্নপ্রায় হয়েও আজও চালিয়ে যাচ্ছে তাঁদের বংশের পুজো।এই জন্যই তাঁদের কৃতিত্ব প্রাপ্য।
বিকেলের দিকে পৌছালাম বাকসার চৌধুরী বাড়িতে।সারাদিনের পর তখন প্রায় ক্লান্ত।সেই মুহূর্তে বাকসার চৌধুরী বাড়ির রূপ,সামনের পুকুর ঘাট যেন নতুনরূপে আবার ঠাকুর দেখতে উৎসাহ প্রদান দান করল।ঠাকুর দালান,প্রতিমা এখানে অভিনব।অভয়ারুপী মা এখানে চতুর্ভুজা।সিংহের রং সাদা।ঠাকুর দালানে জ্বলজ্বল করছে একচালার প্রতিমা।পিছনে কুল দেবতার মন্দির।চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখে পুকুর ঘাটে বেশ কিছুক্ষন বসে রওনা হলাম।তবে ঠাকুর দেখা শেষ কিন্তু জনাই এর মনোহরা তো এখনও বাকি কেনা।পর পর অনেক দোকান,কোন দোকান যে সেরা বলা মুশকিল,তবে স্বাদ অল্প বিস্তর সব দোকানেরই এক।এবার সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম মনোহরার স্বাদ নিতে নিতে আর সারাদিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে।
You may also visit: Garalgachha Jamidar Bari,Serampore Rajbari,Panchetgarh Rajbari ,Top 10 Rajbari near Kolkata
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.