Mahishadal Rajbari-Royal Heritage Stay

Mahishadal Rajbari-Royal Heritage Stay-Food-Tariff-Mahishadal Dayout Plan
মহিষাদল রাজবাড়ি :
জনার্দন উপাধ্যায় হলেন মহিষাদল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।এই রাজবংশ তিনটি রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন।যার প্রথমটি অবলুপ্ত। দ্বিতীয়টি রঙ্গীবসান প্যালেস, যা নির্মাণ করা হয় নবাব আমলে। সামনে সাম্রাজ্যের প্রতীক দুটি সিংহ বিরাজ করায় এই প্রাসাদকে সিংহদুয়ার প্যালেসও বলা হয়। আর তৃতীয়টি হলো আমরা যাকে মহিষাদল রাজবাড়ি বলতে চিনি সেই ফুলবাগ প্যালেস।যেটি নির্মাণ করা হয় সতীপ্রসাদ গর্গের নিজস্ব পরিকল্পনায় ইংরেজ আমলে, তারই রাজত্বকালে।রাজা সতীপ্রাসাদ গর্গ ইংরেজ সরকারের থেকে রাজা বাহাদুর খেতাব পান। রাজবাড়ির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তার মূর্তি আজও বর্তমান। এছাড়াও আছে গ্রীষ্মকালীন আবাসের জন্য লালকুঠি,যেটি বর্তমানে ফুলবাগ পালেসেরই পিছনের অংশে বর্তমান।ফুলবাগ প্যালেস,যথার্থ নাম যার।বাগানে ফুল ফুটলে তার যে শোভা,বিশাল জলের পরিখাবেষ্টিত সামনে উন্মুক্ত প্রান্তর শোভিত এই মহিষাদল রাজবাড়ি যেনো সাদা সোনালীর একটি প্রস্ফুটিত ফুল।তাই কি ফুলবাগ!স্বয়ং সত্যজিৎ রায় যে বাড়ির প্রেমে পড়েছেন,আমরা তো পড়বই,একবার নয়,বার বার।
Watch full video of Mahishadal Palace here with detailed history :
সম্প্রতি বসু পরিবার সিনেমা থেকে শুরু করে সন্ন্যাসী রাজার কিছু অংশ, সুচিত্রা সেন অভিনীত দত্তা, অরুন্ধতী,খোকা ৪২০ সহ আরো অনেক সিনেমার শুটিংয়ের লোকেশন এটি।
চিরাচরিত পাঁচমহলা বাড়ি ভাবলে ভুল হবে।এটি গড়ে উঠেছে খানিকটা ফরাসী স্টাইলে।সাদার যে একটি আলাদা ঐতিহ্য ও স্নিগ্ধতা থাকে তা এই বাড়ি বুঝি আরো একবার বলে দেয়। আর সোনালী বর্ডার ও নক্সা সাদার ওপর যেনো রাজকীয় তকমা যোগ করে।রংতুলির উপযুক্ত মেলবন্ধন।
বাড়িটির বিশেষত্ব তার সুউচ্চ থাম, প্রশস্ত বারান্দা।মুগ্ধ করবে এই প্রাসাদের অতিকায়তা। খানিকটা বৃত্তাকার ফুলের ভাবনাতেই তৈরি এই রাজবাড়ি।তাই বারান্দার একপ্রান্ত দিয়ে ঘুরে ঘুরে যখন শেষ ঘরে পৌঁছবেন দেখবেন শুরু ও শেষ মিলিছে একই বিন্দুতে।বাড়ির উপরতলও একই আদলে তৈরি। মাঝে আছে বিশাল দরবার হল।যা বর্তমানে সংগ্রহশালা।১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে দেখতে পারেন রাজবাড়ির সল্পকিছ সীমিত অংশ।আসল আনন্দ কিন্তু রাজবাড়ীতে একদিনের জন্য বসবাস করায়।সেখানে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা।যেতে পারেন সর্বত্র।দরবার হল পেরিয়ে বারান্দায় অর্ধবৃত্তাকার অন্দমহলের বারান্দায় শ্বেত পাথরের গোল টেবিলটি দেখে একমুহূর্তে চোখে ভেসে উঠলো গোল টেবিলে,পারিবারিক গোল বৈঠকের কথা,যেখানে অপর্ণা সেন চা দিচ্ছেন,সামনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন,পরান বন্দোপাধ্যায়,লিলি চক্রবর্তী বসে। দূরে ওই যে খিড়কি পুকুর।অন্দরের মেয়েদের নিজস্ব পুকুর,একসময় পদ্মদিয়ে ঢাকা থাকত বলে পদ্ম পুকুর বলত সকলে। বর্তমানে আছে অনেক মাছ।

পুকুরের সামনেই আছে নিজেদের ভিটায় দধি বামুন জীউ মন্দির।দুবেলা নিত্য পুজো হয় সেখানে। আছেন সিংহবাহিনী দুর্গামা,রাধাকৃষ্ণসহ আরো পারিবারিক দেবতা। হয় বিপত্তারিনি পুজো বড়ো করে।মন্দির প্রাঙ্গণে আছে একটি ছোটো রথ(বাড়ির মেয়েদের),একটি পালকি,যাতে করে রথের দিন রাজা বের হন।

রাজবাড়ির পিছনে আছে একটি তিনতলা ছোটো বাড়ি, যেটি রান্নার কাজে ব্যাবহার হয়ে আসছে, আজও আমাদের রান্না এখানেই হলো।আছে আর একটি সিঁড়ি দুই বাড়ির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছে অন্দরের সাথে বাহিরের।এই সিঁড়িটি মূলত ব্যাবহার করতেন বাড়ির মহিলারা। পুকুর হোক বা মন্দির,বা পালকি চড়ে কোথাও যাওয়া,এর জন্যই ছিল এই সিঁড়িটি।পর্দানশীন মহিলাদের বাড়ির সামনে বিচরণে ছিল নিষেধাজ্ঞা।ভালো লাগার বিষয়,বাড়ির বর্তমান মহিলারা কলকাতাবাসী হলেও আজও তারা রাজবাড়ির অন্দরে পিছনের সিঁড়ি দিয়েই প্রবেশ করেন।

মূল রাজবাড়ির ঠিক পিছনেই আছে "লাল কুঠি", গ্রীষ্ম কালীন আবাসন ছিল এই রাজবংশের পূর্বপুরুষদের।আজ লালকুঠি জীর্ণ,ভগ্নপ্রায়,গাছগাছালি তার বুকে ঠাঁই নিয়েছে কিন্তু একসময় পুকুরের স্বচ্ছ জলে তার প্রতিবিম্ব ছিল নজরকাড়া।কুঠির ভিতর ঠান্ডা পরিবেশ বজায় রাখতে কুঠির নিচে ছিল অসংখ্য ছিদ্র।যাতে এসে পুকুরের জল ভর্তি হতো,তারপর টানা পাখার মাধ্যমে সেই শীতল হাওয়া ছড়িয়ে পড়ত বাড়ি জুড়ে।খিড়কির রঙিন কাঁচ,বাঁকানো লোহার সিঁড়ি আজও তার সৌন্দর্য্যের সাক্ষ্য বহন করে।লালকুঠি যখন গ্রীষ্ম কালীন আবাসন ছিল,রাজপ্রাসাদ ছিল তখন রুঙ্গীবসান সিংহদুয়ার রাজবাড়ি।ফুলবাগ প্যালেস থেকে হাঁটা পথেই রঙ্গীবসান প্যালেস,মদনগোপাল জিউ মন্দির।
ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে যে বংশের চলা শুরু হয়েছিল তা বহু উথান পতনের মধ্য দিয়ে একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেছে।বর্তমানে এই বংশের শঙ্করপ্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ মহাশয় এই এস্টেটের মালিকানার দাবিদার।এনাদের বর্তমান বাসস্থান কলকাতার মহীষাদল হাউস।
Related Posts : Itachuna Rajbari , Goyna Bori, Denmark Tavern, Mahishadal Old Rajbari
রাজবংশের ইতিহাস :
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় আনুমানিক প্রায় ১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশ থেকে জনার্দন উপাধ্যায় জলপথে ব্যাবসাবাণিজ্যের তাগিদে মেদিনীপুরের গেওঁখালিতে এসে পৌঁছান। আজকের গেওঁখালি তখন ছিল জীবনখালি।এর পূর্বে তিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মচারী।সেই সূত্রে অর্থবান ও বিচক্ষণ ছিলেন তিনি।তৎকালীন মহিষাদলের জমিদার মতান্তরে রাজা ছিলেন কল্যাণ রায়চৌধুরী। কল্যাণ রায়চৌধুরী ছিলেন তমলুক রাজপরিবারের বীরনারায়ণ রায় চৌধুরীর বংশধর।জমিদার কল্যাণ রায়চৌধুরী নবাব সরকারের কাছে কর জমা দিতে না পারায় তার জমিদারি নিলাম হয়।তখন ছিল সান্ধ্যকরের প্রথা।সেই নিলামী জমিদারি কেনেন জনার্দন উপাধ্যায়।সম্রাট আকবরের স্বীকৃতি ও সনদ প্রাপ্তিতে তিনি মহিষাদলাধিপতির মর্যাদা পান।সেই সঙ্গে বৈরাম খাঁর (যিনি ছিলেন হুমায়ুনের বিশেষ বন্ধু, বিশ্বস্ত রক্ষক ও আকবরের অভিবাবক) নামাঙ্কিত একটি তরবারি উপহার পান।সেই থেকে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়ের।এই জনার্দন উপাধ্যায়ই হলেন মহিষাদল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।জনার্দন উপাধ্যায়এর বংশধর রাজা রাজারাম মহিষাদলে গ্রাম স্থাপন করেন।পরে আনন্দলাল যুদ্ধ করে কাশিমগড় ও গুমগড়কে মহিষাদলের অন্তর্ভুক্ত করে এই রাজবাড়ির ভবিষ্যত মজবুত করেন।রাজা জনার্দন উপাধ্যায়ের পরবর্তীতে তার পঞ্চম পুরুষ রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায় পূত্রহীন হওয়ায় তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রানী জানকী দেবী দক্ষ হাতে রাজ দায়িত্ব পালন করেন।তাঁদের একমাত্র কন্যা মন্থরা দেবী।অপুত্রক জানকী দেবী বিচক্ষণ ছিলেন,তাই অন্য কারোর হাতে বংশ তুলে না দিয়ে নিজের জামাতা ছক্কনপ্রসাদ গর্গ ও কন্যা মন্থরাদেবীর পুত্র,অর্থাৎ জানকীদেবীর দৌহিত্র গুরুপ্রসাদ গর্গকে রাজ সম্পত্তি ও রাজপ্রাসাদ হেবা (ইসলাম মতে সম্পত্তি দান) করে দেন। হেবা সূত্রে তিনি রাজা হন।সেই থেকে মহিষাদল রাজবংশে গর্গ পরিবারের অভ্যুত্থান। রাজা গুরুপ্রসাদ গর্গের পরবর্তী দ্বিতীয় পুরুষ রামনাথ গর্গ নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁর দত্তক পুত্র লছমন প্রাসাদ গর্গ রাজা হন।সেই থেকে লছমন প্রসাদ গর্গএর বংশধররাই রাজা হয়ে দেশ স্বাধীন হবার আগের দিন অবধি রাজাসনে আসীন ছিলেন।

রাজা নয় রাণীমারাও কৃতিত্বের দাবী রাখেন :
এ রাজবংশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ বাড়ির রাণীমারাও সময় বিশেষে কৃতিত্বের দাবী রাখেন, জানকী দেবী ছাড়াও রাণী ইন্দ্রানী দেবী,রাণী কল্যাণী দেবী।কল্যাণী দেবীই ছিলেন শেষ রাণীমা যিনি এই প্যালেসে বসবাস করতেন।রাজ পরিবারের রাণী বিমলা দেবী স্বামী (রাজা রামনাথ গর্গের) মৃত্যর পর তাঁর সাথে সহমৃতা হয়ে সতী হন।তাঁর এই কাজ রাজপরিবারকে গরিমান্বিত করে ও রাজ পরিবারের রাণীমাদের কৃতকর্মের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম বলে মনে করা হয়।
মহিষাদলের বৈশিষ্ট্য :
রাজবাড়ি স্থাপন ছাড়াও বংশের রাজা ও রাণীমারা বিভিন্ন সময় বিবিধ জনহিতকর কাজ করেছেন।মন্দির নির্মাণ, দুর্গাপুজোর প্রচলন, দিঘী, ইজারা খনন,রথ নির্মাণ ও রথযাত্রা পালন,স্কুলকলেজ প্রতিষ্ঠা,সূচিশিল্প, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা,বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার,যা মহিষাদল রাজবাড়িকে চারুকলা ও শিল্পকলার পীঠস্থান করে তোলে।
মহিষাদলের রথ জগৎ খ্যাত। আর মেদিনীপুর তথা মহিষাদলের গয়না বড়ি ও স্থানীয় মর্যাদার বৃদ্ধির সহায়ক।
Related Posts : Itachuna Rajbari , Goyna Bori , Denmark Tavern, Mahishadal Old Rajbari

রাজবাড়িতে একদিন :
২০১৮ সাল থেকে মহিষাদল রাজবাড়ি অতিথিদের জন্য ৩টি ঘরকে অতিথিশালা হিসাবে উন্মুক্ত করেছেন। সকাল থেকে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে।এছাড়াও ডে আউট অর্থাৎ সারাদিন কাটিয়েও ফিরে আসতে পারেন,সে ব্যবস্থাও আছে।ছোটো ও বড়ো ঘরের ভাড়া আলাদা যথাক্রমে ৫০০০টাকা ও ৭০০০টাকা। খাবার খরচ ৬৫০ টাকা (চিকেন), ৭৫০টাকা(মটন)।চা ও ব্রেকফাস্ট ঘর ভাড়ার সাথেই ধার্য।


বুকিং করার পদ্ধতি :
ফোনেই বুক করতে পারেন।মাননীয় হরপ্রসাদ গর্গ মহাশয় নিজেই বুকিং সংক্রান্ত সব কিছু তদারকি করেন। আর রাজবাড়ীতে সুমন বাবু আছেন সুব্যাবস্থার জন্য।
যোগাযোগের নম্বর : 9830275928
কি কি দেখবেন :
দরবার হলে দেখতে পাবেন পুরোনো আসবাবপত্র, দুপ্রান্তে বেলজিয়াম কাঁচের বিশাল ড্রেসিং টেবিল,ঝাড়বাতি, তৈলচিত্র,বংশের রাজাদের মূর্তি,সূর্য ঘড়ি,বাদ্য যন্ত্র সহ্য আরও রাজবংশীয় নানান জিনিসপত্র।সংগ্রহশালা খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে ৫ টা।
মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে মাত্র ৬ কিমি হলো গেওখলি,গাড়িতে ১৫ মিনিটেই পৌঁছতে পারেন সেখানে।দেখে নিতে পারেন ত্রিবেণী সঙ্গম। সূর্যাস্ত ও দেখতে পারেন সেখানে।
Google Map : - https://goo.gl/maps/NkRBfAzWz3SPXk4YA
তথ্য সূত্র :- রাজবংশের বর্তমান বংশধর হরপ্রসাদ গর্গ মহাশয় ও এই বংশের কুলপুরোহিত
Awesome
উত্তরমুছুনসমৃদ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুন