Mahishadal Rajbari Old and Gopaljew Temple Haldia
Mahishadal Rajbari Old-Gopaljew Temple Haldia-Mahishadal Dayout
জনার্দন উপাধ্যায়ই হলেন মহিষাদল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।এই রাজবংশ তিনটি রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন।যার প্রথমটি অবলুপ্ত। দ্বিতীয়টি রঙ্গীবসান প্যালেস, যা নির্মাণ করা হয় নবাব আমলে। সামনে সাম্রাজ্যের প্রতীক দুটি সিংহ বিরাজ করায় এই প্রাসাদকে সিংহিদুয়ার প্যালেসও বলা হয়। আর তৃতীয়টি হলো আমরা যাকে মহিষাদল রাজবাড়ি বলতে চিনি সেই ফুলবাগ প্যালেস।
Watch full video of this place with detailed information -
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় আনুমানিক প্রায় ১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশ থেকে জনার্দন উপাধ্যায় জলপথে ব্যাবসাবাণিজ্যের তাগিদে মেদিনীপুরের গেওঁখালিতে এসে পৌঁছান। আজকের গেওখালি তখন ছিল জীবনখালি।এর পূর্বে তিনি ছিলেন আঁকবর মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মচারী।সেই সূত্রে অর্থবান ও বিচক্ষণ ছিলেন তিনি।তৎকালীন মহিষাদলের জমিদার মতান্তরে রাজা ছিলেন কল্যাণ রায়চৌধুরী। কল্যাণ রায়চৌধুরী ছিলেন তমলুক রাজপরিবারের বীরনারায়ণ রায় চৌধুরীর বংশধর।জমিদার কল্যাণ রায়চৌধুরী নবাব সরকারের কাছে কর জমা দিতে না পারায় তার জমিদারি নিলাম হয়।তখন ছিল সান্ধ্যকরের প্রথা।সেই নিলামী জমিদারি কেনেন জনার্দন উপাধ্যায়।সম্রাট আকবরের স্বীকৃতি ও সনদ প্রাপ্তিতে তিনি মহিসদলাধিপতির মর্যাদা পান।সেই সঙ্গে বৈরাম খাঁর (যিনি ছিলেন হুমায়ুনের বিশেষ বন্ধু, বিশ্বস্ত রক্ষক ও আকবরের অভিবাবক) নামাঙ্কিত একটি তরবারি উপহার পান।সেই থেকে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়ের।এই জনার্দন উপাধ্যায়ই হলেন মহিষাদল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
জনার্দন উপাধ্যায়এর বংশধর রাজা রাজারাম মহিষাদলে গ্রাম স্থাপন করেন।পরে আনন্দলাল যুদ্ধ করে কাশিমগড় ও গুমগড়কে মহিষাদলের অন্তর্ভুক্ত করে এই রাজবাড়ির ভবিষ্যত মজবুত করেন।রাজা জনার্দন উপাধ্যায়ের পরবর্তীতে তার পঞ্চম পুরুষ রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায় পূত্রহীন হওয়ায় তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রানী জানকী দেবী দক্ষ হাতে রাজ দায়িত্ব পালন করেন।তাঁদের একমাত্র কন্যা মন্থরা দেবী।অপুত্রক জানকী দেবী বিচক্ষণ ছিলেন,তাই অন্য কারোর হাতে বংশ তুলে না দিয়ে নিজের জামাতা ছক্কনপ্রসাদ গর্গ ও কন্যা মন্থরাদেবীর পুত্র,অর্থাৎ জানকীদেবীর দৌহিত্র গুরুপ্রসাদ গর্গকে রাজ সম্পত্তি ও রাজপ্রাসাদ হেবা (ইসলাম মতে সম্পত্তি দান) করে দেন। হেবা সূত্রে তিনি রাজা হন।সেই থেকে মহিষা দল রাজবংশে গর্গ পরিবারের অভ্যুত্থান। রাজা গুরুপ্রসাদ গর্গের পরবর্তী দ্বিতীয় পুরুষ রামনাথ গর্গ নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁর দত্তক পুত্র লছমন প্রাসাদ গর্গ রাজা হন।সেই থেকে লছমন প্রসাদ গর্গ এর বংশধররাই রাজা হয়ে দেশ স্বাধীন হবার আগের দিন অবধি রাজাসনে আসীন ছিলেন।
Related Posts : Mahishadal Rajbari New, Famous Goyna Bori
১৮৪০এর কাছাকাছি রঙ্গীবসান প্যালেসটি তৈরি হয়।বর্তমানে এই বাড়িটি হেরিটেজ কমিশনের তত্ত্বাবধানে,কাজ চলছে। বাড়িটিতে বর্তমানে কেউ বসবাস করেন না।এই বাড়ির তৎকালে ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড।যেখানে ছিল ঘোড়া রাখার জায়গা,ছিল গুম ঘর। কথিত আছে, সেই আন্ডারগ্রাউন্ডে জলে কুমীর ছাড়া থাকত পাহারাদার হিসেবে।রাজবাড়ির সামনে আছে দুর্গা মণ্ডপ।সেখানেই আজও হয় রাজপরিবারের দুর্গাপুজো,যা এই অঞ্চলের প্রথম দুর্গাপুজো। প্যালেসের আশেপাশে আছে বিঘা বিঘা জমি,পুকুর,আছে ভবানীর মাঠ।একসময় এই মাঠ ছিল বিচার কার্যালয়,শূলে চড়ানোর জায়গা।অনতিদূরেই এই পরিবারের প্রতিষ্ঠিত মন্দির মদনগোপাল জিউ মন্দির।
মহীষাদল এস্টেটের মধ্যেই এই মন্দিরটি।রাণী জানকী দেবী এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি যে শক্ত হাতে রাজ দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাই নয়।দান ধ্যান,জনহিতকর কাজে ছিল তার মন।তখনই নবরত্নশৈলীতে তৈরি হয় এ মন্দির।যা দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরেরও বহু আগে তৈরি।শোনা যায়, এই মন্দিরের কারুকার্যে মুগ্ধ হয়েই সেই নকশার পুনরাবৃত্তি হয় দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মায়ের মন্দিরে।মন্দিরে প্রবেশের দুধারে আছে দুটি নহবত খানা।মন্দির প্রাঙ্গণে আছে দুটি শিব মন্দির,একটি জগন্নাথ মন্দির ও নাট মন্দির।যে নাটমন্দিরএ বিয়ের মণ্ডপ করা আছে,মন্দিরে ঠাকুরকে সাক্ষী রেখে নবজীবনে পা রাখে অনেক নব দম্পতি।রথের দিন এখান থেকেই ঠাকুর রাজার পালকি চড়ে মহিষাদলের রথযাত্রায় সামিল হন। নিত্য পুজো ও ভোগ দেয়া হয়।সাদা ভাত,ভাজা, পরমান্ন,পরমান্নই মূল প্রাসাদ।
এ রাজবংশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ বাড়ির রাণীমারাও সময় বিশেষে কৃতিত্বের দাবী রাখেন, জানকী দেবী ছাড়াও রাণী ইন্দ্রানী দেবী,রাণী কল্যাণী দেবী।কল্যাণী দেবীই ছিলেন শেষ রাণীমা যিনি এই প্যালেসে বসবাস করতেন।রাজ পরিবারের রাণী বিমলা দেবী স্বামী( রাজা রামনাথ গর্গের) মৃত্যর পর তাঁর সাথে সহমৃতা হয়ে সতী হন।
তথ্য সূত্র :- রাজবংশের বর্তমান বংশধর হরপ্রসাদ গর্গ মহাশয় ও এই বংশের কুলপুরোহিত
Great❤️
উত্তরমুছুন