Hetampur Rajbari-Ranjan Palace-Dubrajpur Birbhum
Hetampur Rajbari-Ranjan Palace-Dubrajpur Birbhum-Gupi Gayen Bagha Bayen Shooting Spot-Gosaipur Sargaram Shooting Spot
শান্তিনিকেতনের টানে প্রতি বছরই কোনো না কোনো সময় হাজির হয়েই যাই লাল মাটির দেশে।যদিও দিন খুবই কম থাকে হাতে।আশপাশ ঘুরে আর খোয়াই হাটে অহেতুক বাটিকের সম্ভার কিনেই ফিরে আসি।কিন্তু সেবার মনস্থির করেই ছিলাম এবার চেনার গণ্ডি পেরিয়ে যাবো হেতমপুর।সেই উদ্দেশ্যই বোলপুর থেকে রওনা হয়েছিলাম।রাস্তার ওপর রাজবাড়ির প্রাচীন গেট।ঢুকেই বেশ কিছুটা হেঁটে যখন ঠিক সামনে উপস্থিত হলাম ঘাড় উঁচু করে দেখতে হলো রাজবাড়ির বিশালত্ব।
You may like to watch Royal Heritage stay near Kolkata with detailed information -
হেতমপুর রাজবাড়ি,যা রঞ্জন প্রাসাদ নামেও পরিচিত।উন্মুক্ত মাঠের ওপর হলুদ লালের এই অতিকায় প্রাসাদ কত উথ্থান পতন,ঝড়,জল,মহামারীর সাক্ষী স্বরূপ আজও দাঁড়িয়ে।বড়ো বড়ো পিলারের মজবুত ভিত,ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যর মিলমিশ,ইউরোপিয়ান স্টাইলের গেটে মুগ্ধ করবে আপনাকে।সামনে থেকে সুউচ্চ মজবুত পিলার সর্বস্ব স্থাপত্যই এই রাজবাড়ির নিজস্বতা।Twin Palace ও বলা হত তার স্থাপত্যের জন্য। বাড়ির মূল প্রবেশের দুধারের স্থাপত্য যেনো দুজনে দুজনকে হুবহু নকল করেছে,তাই তো Twin Palace।গঠনগত দিক দিয়ে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির সাথে বেশ মিল।শুধু তাই নয়,একসময় ছিল ৯৯৯ টি দরজা।হাজারদুয়ারীর সম্মানার্থে ১ টি দরজা কম রাখা হয়েছিল এই রাজবাড়িতে।লোক হেতমপুরের হাজারদুয়ারীও বলে তাই।১৯০৫ সালে রামরঞ্জন চক্রবর্তী নির্মাণ করেছিলেন 'রঞ্জন প্রাসাদ' তথা আমাদের পরিচিত 'হেতমপুর রাজবাড়ি'।
বাড়িটির পশ্চিম অংশে আছে D.A.V. স্কুল,পূর্ব দিকে আছে B.Ed কলেজ।রাজবাড়ির যে অংশে স্কুল তার অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভালো মনে হলো।রাজবাড়ির পিছনের অংশ প্রায় ধংসপ্রাপ্ত।রাজবাড়ীতে রাজপরিবারের জন্য কিছু ঘর আজও আছে যেখানে উৎসব অনুষ্ঠানে তারা আসেন।
সত্যজিৎ রায় তার 'গুপি গায়েন বাঘ বায়েন' এর শুটিং এই বাড়ি সহ এতদঅঞ্চল থেকে করেছিলেন বলেই শোনা যায়।এছাড়া সন্দীপ রায়ের 'গোসাইপুর সরগরম' পুরো শুটিংটাই এখান থেকে করা হয়েছিল।
হেতমপুর রাজবাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক লম্বা ইতিহাস।অনেক বংশের ইতিহাস।
অতীতে হেতমপুর ও রাজনগরের ইতিহাস ছিল পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। হেতাম পুর এর ইতিহাস জানতে রাজনগর তাই প্রাসঙ্গিক ভাবেই উঠে আসে।আজ যা হেতমপুর,কোনো এক সময় তার নাম ছিল রাঘবপুর।রাঘব রায়ের নিজের হাতে গড়ে তোলা অঞ্চলই রাঘবপুর বলে পরিচিত ছিল।রাঘবপুর থেকে অনতিদূরে রাজনগরে তখন ছিল মুসলিম রাজ। রাজনগরের মুসলিম রাজা আসাদুল্লাহ খান মারা যাবার পর তার ছেলে বাদী উজ জামান খান রাজা হন। তারই রাজত্বকালে তার তহসিলদারের সাথে রাঘব রায়ের বিবাদ বাঁধে,যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে বিদ্রোহের আকার ধারণ করে সমগ্র রাঘবপুর জুড়ে।সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনগরের সেনাপতি হাতিম খানকে পাঠানো হয়।হাতিম খান সু কৌশলে রাঘব রায়কে পরাজিত করেন ও বিদ্রোহ দমন করে পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে সফল হন। বাদী উদ জামান খুশি হয়ে রাঘবপুরকে হেতম খানকে উপহার দেন।সেই থেকে রাঘবপুর হয়ে উঠলো হেতমপুর।কোনো এক সময় হেতনপুর ফোর্টও ছিল,যদিও সেই ফোর্টএর নির্মাতা স্বয়ং হিতম খান নাকি শেরশাহ সুরি সেই নিয়ে তথ্যের অভাব আছে।তবে হেতম খান যে এটিকে সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করেছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।রাঘব রায়ের মৃত্যুর পর তার ছেলে রাজনগরের রাজা বাদী উজ জামান এর নায়েব নিযুক্ত হন।সেই থেকে রায় পরিবার রাজনগর জমিদার দের গোমস্তা ও ইজারাদার নিযুক্ত হতে থাকে।হেতম খানের মৃত্যুর পর তার নিকটস্থ ও বিশ্বস্ত হাফেজ খান হেতনপুর ফোর্ট এর দায়িত্ব পান।
সমসাময়িক মুরলীধর চক্রবর্তী বাঁকুড়া থেকে এসেছিলেন কাজের খোঁজে ও এসে মুসলিম পরিবারের গৃহ চাকর নিযুক্ত হন।এই মুরলীধরের উত্তরসূরি ছিলেন চৈতন্য চক্রবর্তী।তার গানের সাধনার সুখ্যাতি ছিল।সেই সুবাদেই তার গানে মুগ্ধ হয়ে হাফেজ খান তাকে হেতমপুর ফোর্ট নিয়ে আসেন,দেখভালের দায়িত্ব দেন।সেইদিনই চৈতন্য চক্রবর্তীর হাতে ভবিষ্যত হেতনপুরের বীজ পোতা হয়েছিল।চক্রবর্তী পরিবারের ভাগ্য প্রসন্ন হতে শুরু হয়েছিল।চৈতন্য চক্রবর্তীর দ্বিতীয় পুত্র রাধানাথ ছিলেন সুযোগ্য, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী।তাই দাদা ব্রজনাথের মৃত্যুর পর তিনি একছত্র ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান এই পরিবারের ভবিষ্যতকে।রচনা করেন নতুন ইতিহাস।তিনিই হেতমপুর রাজপরিবারের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।
Related Rajbari Topics : - Itachuna Rajbari, Mahishadal Rajbari, Bawali Rajbari, Surul Rajbari, Gobardanga Rajbari
ধীরে ধীরে রাজনগরের অবস্থার পতন হতে থাকে।বাংলায় পলাশীর যুদ্ধের পর মুঘলদের বিদায় ও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজ শুরু হয়।সিউড়ি হয় ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানির হেড কোয়ার্টার।এদিকে হেতমপুরে রাধানাথের উন্নতি হতে থাকে চোখে পড়ার মতো।তিনি যেমন ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী,জমি কেনার সখ ছিল প্রভূত।বিঘার পর বিঘা জমি ছিল তার দখলে।প্রচুর মৌজা,মহল ও জমির মালিক হন।রাজনগরের মুসলিম রাজার সাথে যুদ্ধে তাঁকে পরাস্ত করে মুসলিম শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করেন।রাধানাথের পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র মতান্তরে বিপ্রদাস।আর পৌত্র রামরঞ্জন। ইনিই ১৯০৫ সালে নির্মাণ করেছিলেন 'রঞ্জন প্রাসাদ' তথা আমাদের পরিচিত 'হেতমপুর রাজবাড়ি'।বাড়ির সামনের গেটে আজও রঞ্জনপ্রাসাদ নামটি খোদিত আছে।জমিদারির সাথে সাথে তিনি খরা ও বন্যার সময় আশপাশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অকুণ্ঠ দানধ্যান ও সবরকম সহযোগিতা করেছিলেন,যা ব্রিটিশ সরকারকে মুগ্ধ করেছিল।১৮৭৫ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থবুক রামরঞ্জন চক্রবর্তীকে রাজা উপাধি দেন।১৮৭৭ সালে তাকেই 'রাজা বাহাদুর' উপাধি দেন লর্ড লিটন।১৯২২ সালে 'মহারাজা' উপাধি পান তিনি।
রামরঞ্জনের ৫ পুত্র ও ৪ কন্যা।পাঁচ পুত্রের (নিত্যরঞ্জন,মহিমা রঞ্জন,সদানিরঞ্জন,কমলা নিরঞ্জন, সত্যরঞ্জন)।মহিমা রঞ্জনের ছিল লেখার সখ।তাঁর লেখা 'তিন খন্ডের বীরভূম বিবরণ' একটি অমূল্য সম্পদ।সত্যরঞ্জন রাজপরিবারের শেষ ব্যাক্তি ছিলেন যিনি ব্রিটিশদের থেকে রাজা উপাধি পেয়েছিলেন।এই পরিবারে শেষ বাস করতেন কমলা নিরঞ্জনের পৌত্র মাধবীরঞ্জন চক্রবর্তী(১৯৪০-২০১৫)।তার কন্যা বৈশাখী চক্রবর্তী বর্তমান হেতমপুরের রাজকন্যা।১২৪০ সালে রাজা রাধানাথ চক্রবর্তী মৃত ছেলে গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীর ইচ্ছা রাখতে শুরু করেছিলেন রাজবাড়ীতে দুর্গাপুজো।তারপর কালের অবক্ষয়ে,আর্থিক অবস্থার অবনতি তে পারিবারিক দুর্গাপুজো হয়ে যায় বারোয়ারি পুজো। স্থানীয় লোকেরাই টেনে নিয়ে যায় পুজোর ব্যয় ভার।কিন্তু রাজকন্যা আবার হাল ধরে রাজপরিবারের পুজোর সম্মান বজায় রাখতে আগ্রহী।রাজবাড়ির প্রাচীন রথটি আজও বিদ্যমান।রথের দিন আজও সেই রথ বেরোয় হেতমপুরের পথে।
পথ নির্দেশ :হেতমপুর বোলপুর থেকে প্রায় ২৪ কিমি সিউড়ির দিকে যেতে পরে।
গাড়িতে কলকাতা থেকে ৪ ঘণ্টা লাগবে আন্দাজ।বোলপুর থেকেও যেতে পারেন গাড়ি নিয়ে।খুব বেশি হলেও ১ ঘণ্টার বেশি লাগবে না।এছাড়া ট্রেনে দুবরাজপুর নেমে রিক্সায় পৌঁছে যেতে পারেন হেতমপুর।
Google Map :
নতুন তথ্য জানলাম। বেশ ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন