Jagadhatri Puja-Significance-Myth-Origin-Rituals-Chandannagar Jagadhatri Puja
শরৎ হলো উৎসবের ঋতু।খুশির সময়। গায়ে গায়ে জড়ানো উৎসব।মা দুর্গারই আর এক রূপ জগদ্ধাত্রী।সংস্কৃত,বাংলা ও অসমীয়াতে জগদ্ধাত্রী কথার অর্থ হলো "Jagaddharti" - Holder (Dhatri) of the World (Jagat) অর্থাৎ জগৎ কে যিনি ধারণ করে আছেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর "আনন্দমঠ" উপন্যাসে মা দুর্গা ,কালী ও জগদ্ধাত্রীকে তুলনা করেছিলেন ভারত মাতার সাথে। ত্রয়ী শক্তিরূপে পুজো করেছিলেন।
পুরাণ মতে,মহিষাসুরকে বধ করার পর সমগ্র দেবলোক আনন্দে আত্মহারা। গর্বে গর্বিত যে এই পুরো কৃতিত্বই তাঁদের।যেহেতু তাদের সম্মিলিত শক্তিতেই,তাদের হাতেই সৃষ্টি দেবী দূর্গার।সে কৃতিত্বের দাবীও তাঁরা করেন।আত্মসম্মানে আঘাত লাগে দেবীর। এক্ষেত্রে দেবতাদের আশীর্বাদে নয় দম্ভ ও রোষে জন্ম হলো দেবী জগদ্ধাত্রীর। তাই আদি শক্তি পার্বতী তাদের পরীক্ষা নিলেন।তিনি মায়া হিসাবে তাদের সামনে এলেন ও নিজের শক্তি দিয়ে একটি ঘাস তৈরি করলেন। এই অবহেলা,অপমানের প্রতিশোধ নিতে একটি তুচ্ছ ঘাসকে ছুড়ে দেন দেবতাদের উদ্দেশে।ইন্দ্রদেব,বায়ুদেব,অগ্নিদেব,বরুণদেব একে একে সবাই মিলে চেষ্টা করেও ওই ঘাসটিকে কোনোমতেই ধ্বংস করতে পারেন না,ব্যর্থ হন।তখনই মা দুর্গা আবির্ভূতা হন নতুনরূপে।সিংহে অধিষ্ঠিতা লাল বেনারসিতে সজ্জিতা চার হাতে উজ্জ্বল মূর্তিতে আবির্ভূতা দেবী জগদ্ধাত্রী।দেবতাদের দম্ভ থেকে জন্ম হয় এক হাতির, সিংহের থাবায় যার বিনাশ হয় ।
ছবিটি সংগৃহীত
Related Posts : Krishnanagar Jagadhatri Puja
অন্য মতে,দেবী দুর্গা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধকালীন মহিষাসুর দেবীকে ছলনা করে বহুবার নিজের রূপ বদলায়।যখন অসুর হাতিরুপে দেবীর সামনে আসেন,তখন দেবী চার হাতে সিংহের ওপর অধিষ্ঠিত হয়ে আবির্ভূতা হন। তিনিই আসলে জগদ্ধাত্রী।সেই হাতির বিনাশ করেন চক্র দিয়ে।মহিষাসুরের ক্ষেত্রে হাতি হলো ধ্বংসের রূপ।সংস্কৃতে, হাতি হলো করী।তাই সংস্কৃতে জগদ্ধাত্রীর হাতে অসুরের বিনাশই হলো "কারিন্দ্রাসুরা"।এক্ষেত্রে অসুর রুপে হাতি কে বধ করেন দেবী। এ প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন,"মানুষের চঞ্চল মন ক্ষেপাটে হাতির মতো, হাতির বিনাশ মানে চঞ্চল মনের বিনাশ।"। রামকৃষ্ণ দেবের পত্নী মা সারদা দেবী রামকৃষ্ণ মিশন এ এই পুজো শুরু করেন।দেবী এখানে শক্তি রুপে পূজিত হন। কথিত আছে গুপ্ত যুগের মুদ্রাতে সিংহ বাহিনী এক দেবীর চিত্র পাওয়া যায়,তবে সেই দেবী কি জগদ্ধাত্রী দেবী কিনা সে বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণ নেই।
বৌদ্ধ তন্ত্র ও হিন্দু তন্ত্রে এই দেবীর উল্লেখ আছে। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুসারে মা দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী অভিন্ন। "জগদ্ধাত্রী দুর্গায় নমঃ" এই মন্ত্রে দেবী পূজিত হন। সিংহের ওপর অধিষ্ঠিত ত্রিলোচনা দেবী চতুর্ভুজা।চার হাতে তাঁর শঙ্খ,চক্র,ধনু ও বাণ।বাম হাতে শঙ্খ ও ধনুক, ডান হাতে চক্র ও বাণ।যেখানে শঙ্খ হলো উজ্জ্বলতা ও পবিত্রতার প্রতীক,চক্র অশুভ আত্মাকে ধ্বংস করে, তীর প্রজ্ঞা এবং ধনুক মনের একাগ্রতার প্রতিনিধিত্ব করে। উজ্জ্বল উদিত সূর্যের মতো দেবীর গাত্র বর্ণ।লাল বেনারসি ও গয়নায় শোভিত দেবী,গলায় সর্প বেষ্টিত। এইভাবে দেবী আসেন ও শুভ সময়কে সূচিত করেন।
কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীর দিন এই পুজো হয়। ইংরেজি মাস অনুযায়ী নভেম্বর এই হয় এই পুজো।প্রতি বছর তিথি অনুযায়ী পাল্টায় দিনটি। মা দুর্গারই আর এক রূপ ধরা হয়।তাই পুজোর নিয়মেও মিল।তবে এক দিনেই হয় সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমীর পুজো। নৈবেদ্য থেকে বলি ও সন্ধি পুজো সব রীতিই এখানে পালন করা হয়।দশমীর দিন বিসর্জন হয় মা এর। আরও একটা বছর অপেক্ষা।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই হলেন এই পুজোর স্রষ্টা।কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে শুরু করেন প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর।কৃষ্ণ নগর,চন্দন নগর ছাড়াও তেহট্ট, রিষড়া,ভদ্রেস্বর,বৈচী, অশোক নগর - কল্যাণ গড়ে জাক জমক পূর্ণ ভাবে হয় এই পুজো।পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ওড়িশাতেও হয় এই পুজো।হয় জগদ্ধাত্রী মেলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.