Krishnanagar Jagadhatri Puja History-Nadia Rajbari-Krishnachandra Roy
Krishnanagar Jagadhatri Puja History-Nadia Rajbari-Raja Krishnachandra Roy
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো:
কৃষ্ণনগর,রাজা কৃষ্ণচন্দ্র,জগদ্ধাত্রী পুজো সব যেনো এক সুতোয় গাঁথা মালার মতো।অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই পুজোর স্রষ্টা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ছিলেন নদীয়ার মহারাজা।বাংলার সাহিত্য,সংস্কৃতি ও হিন্দু সমাজে তাঁর ভূমিকা চির স্মরণীয়।তাই তার সভাও অলঙ্কৃত করে ছিলেন গুণী মানুষজন। অন্নদামঙ্গল কাব্য প্রণেতা ভারত চন্দ্র রায় গুনাকর সহ শাক্ত পদাবলিকার রমাপ্রসাদ সেন প্রমুখ গুণীজন ছিলেন তার সভাসদ। অন্নদামঙ্গল তারই ফরমাসে রাজসভায় রচিত হয়।রাজবাড়ীতে দুর্গা পুজোর প্রচলন ছিল বরাবর।পরিবার মতে রাজরাজেশ্বরীরুপে মা পূজিত হতেন।রাজা যেমন ছিলেন প্রজা বৎসল তেমনই আবার বিচক্ষণ।বাংলার নবাব আলীবর্দী খা কে রাজকর দিতে না পারায় ও নাতি সিরাজের ষড়যন্ত্রে খাজনা বাকীর অভিযোগে বন্দী করা হয় মহারাজকে। (বাংলার নবাবের মতান্তরে মীর কাশিম দ্বারা) মহারাজ ও তার ছেলে বন্দী হন।প্রায় ৯ লক্ষ টাকা দাবী করা হয় তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে।বন্ধু বান্ধব ও ইংরেজ সরকারের সহায়তায় তিনি মুক্তি পান সেই ঋণ শোধ করে।যখন তিনি নদীপথে ফিরছেন সেই দিনটা ছিল দুর্গা পুজোর দশমী।নদীর ধারে ধারে কাশ ফুলের সাথে কানে আসছিল ঢাক বাজার আওয়াজ,বিসর্জনের বাজনা,উলু ধ্বনি।তিনি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়লেন নিজের বাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজোয় মায়ের পায়ে অঞ্জলী না দিতে পারায়,তার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায়।দু চোখে জলের ধারার সাথে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়লেন নৌকাতেই।মা স্বপ্নে চার হাতে সিংহের ওপর চড়ে কুমারীর বেশে দেখা দিলেন তাঁকে। বললেন,কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীর দিন পুজো করলেই মিলবে মা দুর্গার আশীর্বাদ।বাড়িতে ফিরেই ডেকে পাঠালেন বিখ্যাত সব পুরোহিতদের।তারাই বললেন এই দেবী মা জগদ্ধাত্রী,দুর্গার বিশেষ রূপ।বললেন ২০০০ বছর আগে পুরাণে এই দেবীর উল্লেখ আছে। তৈরী হলো মূর্তি।১৭৬২ সালে শুরু হয় প্রথম এই পুজো, মতান্তরে ১৭৫৪ ।সেই থেকে আজ অবধি রাজবংশ ধরে রেখেছে পরম্পরা।দুর্গা পুজো ও জগদ্ধাত্রী এই দুই পুজোতেই আসতে পারেন সাধারণ জনগণ।
বর্তমান রাণীমার মতে,মা বছরে একবারই আসেন,তাই তাঁর যেনো কোনো কষ্ট না হয় সেই বিষয়ে সদা সচেষ্ট থাকে পরিবারের লোকজন। যথা সম্ভব নিষ্ঠা ও রীতি মেনেই হয় পুজো। যথাযোগ্য সম্মানের সাথে নাট মন্দিরে চলে পুজো।একই দিনে সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমীর পুজো হয়।মা এখানে মহামায়া। আমিষ ভোগ ও দেয়া হয়।আবার খিচুড়ি,নরকম ভাজাও দেয়া হয়।আগে ব্যপক হারে বলী হতো কিন্তু এখন বলী নিষিদ্ধ যেমন তেমনই পরিবারের লোকজন মনে করেন বলী নিয়ে মা কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারেন না।তাই তারা বলীর বিপক্ষে।বর্তমানে চালকুমড়া, কলা বলী হয়।হোম, যজ্ঞ তো হয়ই।সন্ধি পুজোই আসল।সেই সন্ধিক্ষণেই এক ঝলক হলেও মা আসেন,সেটা বুঝতে পারেন বলেই দাবী পরিবারের লোকেদের।
নাটমন্দিরে দেখা যায় পংখের কাজ,হিন্দু ও ইসলামিক রীতির মিশ্রণ।বাজে সানাই।আলোয় সেজে ওঠে রাজবাড়ি। বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ও দেখা যায়।
অন্নদামঙ্গল এর অন্নদা ঝাঁপি রাজবাড়ীতেই আছে আজও। এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।সেই ঝাঁপিতেই হয় লক্ষ্মীপুজো,কোনো মূর্তিতে না।ঝাঁপিতে ধান ভরে,নতুন কাপড় পেতে পুজো হয়।পুরোনো ধান নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।মা লক্ষ্মী সর্বদা বিরাজিত এই পরিবারে।
Related Posts : Jagadhatri-Puja-History-Rituals-Myth, Chatu-Babu-Latu-Babur Bari, Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo, Sovabazar Rajbari Durga Puja, Kolkata Heritage Buildings, Gobordanga Jamider Bari Puja, Prasannamoyee Kali Mandir
মূর্তির বিশেষত্ব :
স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী মা এখানে কুমারী রূপে পূজিত হন। বাহন সিংহ তবে ঘোড়া মুখো। আর পা যেনো একটু উচুঁ।দেবী যেন যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত।
চন্দননগরের দেওয়ান,ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন রাজার বিশেষ বন্ধু ও ফরাসী দের দেওয়ান। তিনিও উপস্থিত ছিলেন প্রথম পূজোয়। শোনা যায় পরের বছর থেকে তিনি চন্দন নগরে তার গৃহে শুরু করেন এই পুজো।
এই পুজোকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সহ পরিবারের উত্তরসুরীরাও।রাজার পরবর্তীতে রাণী ভুবনেশ্বরী দেবী মালোপাড়ায় পুজো শুরু করেন। জ্যোতির্ময়ী দেবী পুরস্কারের প্রথা চালু করেন। কৃষ্ণনগরে যত বারোয়ারী পুজো হয় তারা বিসর্জনের আগে আসে রাজবাড়ি পরিক্রমায়।সেটাই রীতি চলে আসছে রানীর সময় থেকে আজও। ১৭৭২ সালে কৃষ্ণনগরের চাষা পাড়ায় কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারা শুরু করে এই পুজোর।যা বুড়িমার পুজো বলে পরিচিত।প্রথমে তো ঘট ও পটে পুজো শুরু হয়।স্থানীয় গোয়ালার দুধ বিক্রি করে পুজোর আয়োজন করতো।পরে ১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘটপটের পরিবর্তে মূর্তির মাধ্যমে পুজোর শুরু করেন। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জএর চাউল পট্টিতে এই পুজো শুরু করেন।যা চন্দন নগরের আদি পুজো। আজ বর্তমানে কৃষ্ণনগরের বুকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টা পুজো হয়। রাজা প্রজা নির্বিশেষে সবাই পুজোর দিনে দেবীর ভক্ত।পুজোর টানে দেশ বিদেশের পরিবারের লোকজন এক হন।
এই পুজো দিয়েই শেষ হয় বাঙালির উৎসবের ঋতু।আবার অপেক্ষা।এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে পুজো, চলছে রাজার জয়গান।এভাবেই মানুষ তার কীর্তির মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকেন বোধ হয়।
ছবি সৌজন্যে : আনন্দবাজার পত্রিকা ও নদীয়া রাজবাড়ির ফেসবুক পেজ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.