Adi Maa Chaulpatty Jagadhatri Puja-Indranarayan Chowdhury-Chandannagar
জগদ্ধাত্রী পুজো প্রথম শুরু করেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে। আর চন্দননগরে প্রথম শুরু করেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী নিজের বসত গৃহে।তিনি ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরম বন্ধু। দুঃসময়ে আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন প্রচুর।সেই সূত্রে মহারাজা এসেছেনও চন্দননগর বহুবার। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে পুজো প্রথম হয় ১৭৫৪ সাল মতান্তরে ১৭৬২ সালে। আর তার পরের বছরই নিজের গৃহে পুজো শুরু করেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী।তাহলে সেটা হবে ১৭৫৫ অথবা ১৭৬৩।তবে চন্দন নগরের পুজো শুরুর ইতিহাস আজও বিতর্কিত।ইন্দ্রনারায়ণ বাবু মারা যান ১৭৫৬ সালে।তাহলে পুজো তার পক্ষে চালু করা সম্ভব নয় যদি ১৭৬৩ কে ধরি। তবে চন্দননগরে পুজো শুরু ১৭৫০ এর আগেই।
লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার ছিল বাংলার চাল বিক্রেতাদের ব্যাবসার কেন্দ্র। চাউলপট্টীর জগদ্ধাত্রী পুজো তিনশো বছরেরও পুরোনো।শোনা যায় এই পুজোর প্রচলন করেন ফরাসী দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী।আজকের চন্দননগর সেকালের ফরাসডাঙ্গা।ফরাসী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তত্ত্বাবধানে বাংলা তথা ফরাসডাঙ্গাকে কেন্দ্র করে ফরাসীদের ব্যাবসা বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।চন্দননগর ছিল সকালের বাংলার শস্য ভান্ডার। ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন চন্দননগরের চাউলপট্টীর সাধারণ ব্যাবসায়ী থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তায় ও কর্মতৎপরতায় হয়ে ওঠেন ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। ছোটোবেলা থেকে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বড়ো হওয়ায় বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল বেশ।মুর্শিদকুলি খার সাহায্যার্থে দুই ভাই যশোর থেকে চন্দননগর এসে পৌঁছান। তিনি চালের ব্যাবসা শুরু করেন ও দাদা রাজারাম মুর্শিদাবাদে নবাবের হিসাবপত্র দেখাশোনা করার কাজ পান।বালক বয়স থেকেই ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চালাক।ফরাসডাঙায় থেকে ফরাসী ভাষা রপ্ত করেছিলেন।তাই ফরাসী সাহেবরা ফরাসডাঙার জঙ্গলে শিকার করতে গেলে বালক ইন্দ্রনারায়ণকে সঙ্গে তাদের গাইড হিসাবে নিয়ে যেতেন, আর এই সুবাদে ফরাসীদের সাথে তার বেশ আলাপ পরিচয়ও হয়েছিল। ঠিক যেমন শোভাবাজার রাজবাড়িতে নবকৃষ্ণ দেবেরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছিল ইংরেজদের বদান্যতায়,ইন্দ্রণারায়ণও তেমনি ফরাসী আনুকূল্যে ফরাসী দেয়ান নিযুক্ত হলেন।তিনি বাংলা,বিহার,দক্ষিণভারত থেকে আসা মালপত্রের দেখভাল করতেন,হিসাব রাখতেন, রাজস্ব আদায় করতেন।এছাড়া প্রথম থেকেই চালের ব্যাবসা ও পরে সুদের করবারও শুরু করেছিলেন।চাউলপট্টীকে বলা হতো তখন শস্য ভান্ডার। লক্ষ্মীগঞ্জের বাজারে ছিল ১১৪ টি ধানের গোলা।যেখান থেকে ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাভ হতো বিপুল পরিমাণে।সেই সঙ্গে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীকেও আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
Related Posts: Jagadhatri-Puja-History-Rituals-Myth, Krishnanagar Rajbari Jagadhatri Puja , Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo, Sovabazar Rajbari Durga Puja, Prasannamoyee Kali Mandirইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বাৎসরিক ১২,০০০ টাকায় ফরাসী ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে চন্দননগরের ইজারা নিয়েছিলেন। লক্ষ্মীগঞ্জএ গঙ্গার ধারের আরতে থাকত মণ মণ ধান।নৌকায় যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।কাজের চাপ থাকত দুর্গাপুজোর চারদিনও ব্যাবসায়ীদের।কোনো মজাই করতে পারতেন না তারা পূজোয়।সেই দুঃখ দূর করতেই ব্যাবসায়ীদের আবদারে নিজের প্রসাদসম বাড়িতে বসে স্থির করেন যে তিনি জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করবেন।সেই থেকে নিজ গৃহে চাউলপট্টীর আদিমার পুজো শুরু। স্থলপথে ও জলপথে ক্লাইভ আক্রমণ করেন চন্দন নগর। রবার্ট ক্লাইভ তখন চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জকে বলতেন "গ্রেনারী অফ বেঙ্গল"।নির্মম লুন্ঠনের পর ক্লাইভের গোলায় বাড়ির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, নন্দদুলাল মন্দিরেও লুঠ চলে।তখন দেবীর অবস্থা সংকটে ভেবে ব্যাবসায়ীরা দেবীকে নিয়ে আসেন চাউলপট্টীতে।তারপর থেকে চাউলপট্টীর বারোয়ারীপুজো চলছে।প্রথম সংকল্প হয়েছিল ইন্দ্রনারায়ণ এর নামে।এখনও পর্যন্ত পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরসূরীদের নামে এই পুজোর সংকল্প করা হয়। তাই পুজো শুরুর ইতিহাসে অনেক সংশয় থাকলেও কোনো বারোয়ারি পুজোতে পরিবারের সদস্যের নামে সংকল্প সত্যি দৃষ্টান্তমূলক।
আবার কারো মতে,১৭৫৭ সালে রবার্ট ক্লাইভের চন্দননগর লুণ্ঠনের পর পুজো বন্ধ হয়ে যায় যেটা আবার কৃষ্ণচন্দ্রের পুজো শুরুর পর আবার পুনরায় শুরু হয়।চাউল পট্টীর আদি মায়ের পূজোই ছিল ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বাড়ির পুজো।তাই তার পরিবারের নামেই হতো পুজোর সংকল্প ও পাঁঠা বলীর পর সেই প্রসাদী পাঁঠা পাঠানো হতো ওনার বাড়িতে বেশ কিছু বছর আগেও।
কথিত আছে,একবার কিছু ব্যাবসায়ী বৃষ্টিতে জল জমার কারণে কৃষ্ণনগর ফিরতে পারেননি জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়, তখন তারা নিজেরা চন্দননগরেই পুজো করেন।শুরুর ইতিহাস যাই হোক চাউলপট্টীর দেবী মূর্তি, "আদি মা" র পূজোই চন্দননগরের প্রাচীনতম পুজো।লক্ষ্মীগঞ্জের কাপড়পট্টীর পুজো হলো চন্দননগরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পুজো।১৭৮৮ সালে চাউলপট্টীর চাল ব্যাবসায়ীদের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় কাপড় ব্যাবসায়ী শ্রীধর বন্দোপাধ্যায় (মতান্তরে শশধর) চাঁদা তুলে এই পুজো শুরু করেছিলেন।এই অঞ্চলের অন্য দুটি পুজো হলো লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা (স্থাপিত ১৯০৩) ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের পুজো(স্থাপিত ১৯৩৩)।
পালপাড়ার বসু পরিবারের পুজোও উল্লেখ করার মতো।যাদের পুজো প্রথম আদিবাড়ি মুর্শিদাবাদে শুরু হলেও পরে চন্দননগরে চলতে থাকে।
উল্লেখ করে রাখি এক অভিনব পুজোর,যেখানে পুরুষরা মেয়েদের মত শাড়ি,শাখা সিঁদুর পরে মাকে বরণ করেন। ভদ্রেশ্বরের তেতুঁলতলার পুজোর কথা বলছি। মেয়েরা এই পূজোয় ব্রাত্য।
Related Posts: Jagadhatri-Puja-History-Rituals-Myth, Krishnanagar Rajbari Jagadhatri Puja , Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo, Sovabazar Rajbari Durga Puja, Prasannamoyee Kali Mandir
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.