হেরিটেজ বাস
Sutanuti Trail-Kolkata Heritage Walk-Kumortuli-Sovabazar Rajbari
সন ২০১৩,সকাল সকাল খবরের কাগজের পাতায় চোখ পড়তেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল একটা বিজ্ঞাপন দেখে। বিশদ জানতে বিজ্ঞাপনে দেয়া ফোন নাম্বারটি ডায়াল করে বুঝতে পারলাম, 'West Bengal Tourism' আয়োজন করতে চলেছে একটি ' One day tour ' , যেখানে তারা ঘুরিয়ে দেখাবে পুরাতন সুতানুটিকে। এ সুযোগ হাতছাড়া করার নয়।সত্বর নিজের ও কর্তার আসন সংরক্ষণ করলাম এবং সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল।
Want to experinece the the Metcalfe Hall Tour !! Click below - :
রবিবার খুব সকালেই পৌঁছলাম বিবাদী বাগের অফিসে।আমরাই ছিলাম ওদের আয়োজিত এই টুরএর প্রথম দিনের সদস্য।আমরা ছাড়াও ছিল আরো কিছু পরিবার। বিবাদী বাগ থেকেই শুরু হলো পরিক্রমা। সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার পর সুন্দরী কলকাতা তখন সবে চোখ মেলছে।আশপাশ থেকে ভেসে আসছে চায়ের ফোটার গন্ধ। সকালের আবেশ চারিদিকে।
পৌঁছলাম কুমোরটুলি ঘাটে।সকালে গঙ্গার হাওয়া ও হাতে গরম গরম, ধোঁয়া ওঠা, এক ভাঁড় চা যেন আলাদা মাত্রা এনে দিল সকালটার।স্নিগ্ধ বাতাসে হাঁটা শুরু করলাম এই ভালোলাগা নিয়ে।ঢুকে পড়লাম কুমোরটুলির রাস্তায়।
কুমোরটুলি :- শোভাবাজারের রাজা 'নবকৃষ্ণ দেব ' ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন দুর্গাপূজা করবেন মনস্থ করেন, তখন কৃষ্ণনগর থেকে দু-ঘর কুমোর এনে থাকতে দেন এই কুমোরটুলি অঞ্চলে।সেই থেকে আজও কুমোরটুলি হলো মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান।যেখানে সারাবছর ধরে চলে ছোট ,বড়,নানা মাপের বিভিন্ন দেবদেবীর গড়ার কাজ।পুরো পরিবার নিযুক্ত থাকে এই কাজে,মেয়েরাও এর ব্যতিক্রম নয়।সাধারণত মূর্তি গড়েন নবীন কারিগররা আর প্রবীণরা করেন চক্ষুদান।দেখতে লাগলাম সব ঘুরে ঘুরে।কত ঠাকুর চারিপাশে।
সংগৃহীত ( Pic collected from Net )
প্রায় প্রতিবছরই "কুমোরটুলি সার্বজনীন" দেখতে গিয়ে হেঁটেছি এই পথেই।কিন্তু লক্ষ মানুষের ভিড়ে,আলোর আতিশজ্যে অনুভব করতে পারিনি এই রাস্তার হৃৎস্পন্দন,যা সেদিন সকালের মুক্ত হাওয়ায়,চারিপাশে গড়ে রাখা অজস্র দেবদেবীর মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথম অনুভব করলাম।
কুমোরটুলি শেষে এবার এগিয়ে চললাম শোভাবাজার রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। পৌঁছলাম রাজবাড়ির সিংহ দুয়ারে।
শোভাবাজার রাজবাড়ি :- প্রবেশ করলাম কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শোভাবাজার রাজবাড়ীতে,যা তৈরি করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব।ইনি ছিলেন লর্ড ক্লাইভের মুন্সি।তারই দেয়া এই রাজা খেতাবটি। রাজবাড়ীতে ঢুকলেই প্রথম যা চোখে পড়ে,সেটা হলো ঠাকুরদলান ও সামনের খোলা প্রাঙ্গণ।সেই প্রাঙ্গনকে মাঝখানে রেখে চারিদিক দিয়ে পিলার আকারে তৈরি এই বাড়িটি।মাঝের এই প্রাঙ্গণেই হতো তখনকার দিনে কবিগানের লড়াই।এসেছিল ভোলা ময়রা ও এন্টনি ফিরিঙ্গি কবিয়ালের দল। শোভাবাজার রাজবাড়ি
সংগৃহীত ( Pic collected from Net )
খানিকটা হাঁটাহাঁটির ফলে ও খানিকটা হয়ত ইতিহাসের ভারে ক্লান্ত লাগছিল।বসে নিলাম সেই ঠাকুর দালানের সিঁড়িতে।সেখান থেকে সোজা দেখা যাচ্ছিল নাচঘর।যা আজ তার গরিমা হারালেও,এক সময় গমগম করত।অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়েছিল সেদিন।
লর্ড ক্লাইভ, বেন্টিংক থেকে শুরু করে বিবেকানন্দ কে না এসেছেন এই বাড়িতে এককালে।আজ সেখানেই বসে আমি, অতীতকে আঁকড়ে।এ এক অদ্ভুত ভালোলাগা! এই দালানই সেজে ওঠে দূর্গা পূজোর সময় সাবেকি চালে।রাজবাড়ির পুজো দেখতে আসে ভিন্ন প্রান্ত থেকে অজস্র মানুষ।ঘুরে দেখলাম বাটির আনাচেকানাচে।
এই সেই ঠাকুরদালান
রাজবাড়ির কাছে এবার বিদায় নেবার পালা আমাদের। বাড়ির ভিতর দিয়েই আর একটি পথে বের হলাম আমরা,পৌঁছাবার পালা এবার শোভাবাজার নাটমন্দির।
(পরিক্রমা চলবে এভাবেই................পরবর্তী পর্বে)।
দ্বিতীয় পর্ব || 2nd Part:
Lovely Story
উত্তরমুছুন