Freedom Fighter - Nanibala Devi - First Political Prisoner
বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ছিলেন ননীবালা দেবী।
সংগৃহীত ( Pic Collected from Net )
প্রচারের আলোয় আসেননি তিনি কোনোদিনই।জানিনা ইতিহাস তাকে কতটা মনে রেখেছে। স্বাধীনতা কিন্তু শুধু চেনা,স্বনামধন্য বিপ্লবীদের হাত ধরেই আসে নি।স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁরাও ততটাই স্মরণীয় হওয়া উচিত যারা পিছনে থেকে সেই বিপ্লবীদের সফল হতে সাহায্য করেছিলেন। অসংখ্য মহিলা সেযুগে এই কৃতিত্বের দাবিদার।
ননীবালা দেবী ছিলেন আরো এক ধাপ এগিয়ে।একটা গোটা কাঁচা লঙ্কা খেলেই অনেকের যেখানে অসহ্য পরিস্থিতি হয় সেখানে কাপড় খুলিয়ে দুবাটি কাঁচালঙ্কা ঢোকানো হয়েছিল তাঁর শরীরে।সেই অসীম সাহসী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নারীর কথা আজ আপনাদের বলবো।
১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে জন্মগ্রহণ করেন।বাবা সূর্যকান্ত বন্দোপাধ্যায় ও মা গিরিবালা দেবী।সেই সময়ের রীতি মেনেই ১৮৯৯ সালে, মাত্র এগারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর।বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামী মারা গেলে, ষোলো বছর বয়সে বিধবা হয়ে ফিরে আসেন বাবার আশ্রয়ে।
You can also visit : Chatu-Babu-Latu-Babu, Kolkata Heritage Buildings, Itachuna Rajbari, Denmark Tavern, Ramnagar Fort, Chunar Fort, Tagore's House in England, Bengal English Castle, Mahalaya, Cricket Ball History, Railway Mutton Curry History, Zebra Pulled Car, Ledikeni History, Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালের কথা।দেশের চারিদিকে তখন চলছে ব্রিটিশের নির্মম অত্যাচার।এইরকম বিপদের দিনে ভাইপো বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর কাছে দীক্ষা পেলেন ননীবালা দেবী। যুগান্তর দলের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠলেন,যে যুগান্তর দল নেতৃত্ব দিতেন তার ভাইপো।
দেশকে ভালোবেসে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেন তিনি। যেমন,বিপ্লবীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন,দলের নির্দেশ ও খবরাখবর একজায়গার বিপ্লবীদের থেকে অন্যদের পৌঁছে দিতেন,বিপ্লবীদের নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখতেন,অস্ত্রসস্ত্র লুকাতেন ও গোপনে বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছেও দিতেন।
দলের স্বার্থে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বহুবার পাল্টেছেন নিজের ভাড়া বাড়ি। বাড়ি পাল্টে পাল্টে দলের লোককে আশ্রয় দিয়েছেন বারে বারে।
You may like to watch the house of 'Vande Mataram' Creator -
একবার রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার হন কিন্তু জেলে যাবার আগে বলে যেতে পারেননি 'মাউজার' পিস্তল কোথায় রাখা আছে।দলের নির্দেশে জেলে ঢুকে পিস্তলের খবর আনতে চললেন এই দুঃসাহসী নারী।বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে শাঁখা সিঁদুর পরে প্রেসিডেন্সি জেলে এলেন পিস্তলের খবর নিতে।যা সেই যুগে অকল্পনীয়।তবে পুলিশের সন্দেহ তার প্রতি হতে শুরু হয়েছিল।
এর মধ্যেই রিষড়া, চন্দননগরে বহুবার বাড়ি বদল করে গৃহকর্ত্রী হিসাবে আশ্রয় দিচ্ছিলেন।পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যত হল এবার।পলাতক হলেন তিনি। পেশোয়ার পালিয়ে গেলেন।কিন্তু ষোলো দিনের মাথায় পুলিশ যখন তাকে গ্রেপ্তার করলেন তখন তিনি কলেরায় আক্রান্ত।পেশোয়ার জেলে থেকে সুস্থ হলে কাশীর জেলে পাঠানো হলো তাঁকে।
কাশীতে তাঁর ওপর শুরু হলো অকথ্য অত্যাচার।প্রতিদিন তাঁকে জেলগেটে এনে জেরা করতেন কাশীর পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী। জেরায় মুখ দিয়ে কোন কথা না বেরোনোয় শুরু হলো দৈহিক নির্যাতন।দুজন মহিলা প্রহরী(wardress) তাঁকে মাটিতে ফেলে কাপড় খুলে শরীরে ভিতরে দিয়ে দিলেন দুবাটি কাঁচালঙ্কা।অসহ্য জ্বালা সহ্য করেও বলেননি একটুও কথা।
কাশীর জেলে মাটির নিচে ছিল একটা ছোট্ট আলোবাতাসহীন শাস্তি কুঠুরী।সেই দমবন্ধ কুঠুরীতে পরপর তিনদিন প্ৰায় ৪৫ মিনিট করে তাঁকে রাখা হলো হাত-পা বেঁধে।মুখ খুললেন না তাও।শেষ দিন যখন তাকে বার করা হলো তিনি জ্ঞানশূন্য। হাল ছেড়ে কাশী থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে তাকে স্হানান্তরিত করা হলো।
১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশন ধারা(Bengal Regulation III of 1818) প্রয়োগ হলো তাঁর বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্সি জেলের প্রথম মহিলা রাজবন্দী।অনশন করলেন লাগাতার ২১ দিন।জেরা করতে আসতেন স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট গোল্ডি।না মুখ দিয়ে বার করতে পারলেন কোনো কথা,না মুখে ঢোকাতে পারলেন কোনো খাবার। পুলিশ হাল ছেড়ে দিল।
এভাবে দুবছর জেলে ছিলেন।হঠাৎই ১৯১৯ সালে তার জেল থেকে ছুটি হলো। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে কেউ তাঁকে ঠাঁই দিলেন না।পুলিশকে যে সবাই ভয় পায়।অবশেষে উওর কলকাতার এক বস্তিতে মতান্তরে হুগলিতে থাকতে শুরু করলেন।সেলাই ও লোকের বাড়ি কাজ করে কোনরকমে নিজের খরচ চালাতেন।
দেশ স্বাধীন হবার কুড়ি বছর পর ১৯৬৭ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। এমন দেশপ্রেমীর কি করুন পরিণতি!
তাঁর জন্মদিন বা মৃত্যুদিন কারো মনে নেই।তার নামটাও আমরা বেশিরভাগই জানি না।কিন্তু বলুনতো, স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর কি কোনোই অবদান নেই?
আজ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে স্বাধীন দেশের এক নারী হিসাবে মহীয়ান এই নারীর প্রতি রইল আমার শ্রদ্ধা নিবেদন।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.