Sutanuti Trail - Kolkata Heritage Walk Part 2
শোভাবাজার নাটমন্দির
Sutanuti Trail-Kolkata Heritage Walk-Sovabazar Natmandir-Marble Palace-Jorasanko Rajbari
প্রথম পর্বে শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে আমরা শোভাবাজার নাটমন্দির এর দিকে রওনা হয়েছিলাম। পৌঁছলাম এবার।
You may also like :
ইংরেজি ১৮৩০ সনে তৈরি এই মন্দির।যা অতীত ও বর্তমানের সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে স্বমহিমায় আজ ও দাঁড়িয়ে। প্রতিবছর ২৪শে আগস্ট এখানে কলকাতা শহরের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে অনুষ্ঠিত হয় ' সুতানুটি উৎসব '।দ্বিতল এই প্রেক্ষাগৃহের উপর তলায় লাইব্রেরী, রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার মূল্যবান সব বই ,আর নিচের তলায় আজও হয় নানা অনুষ্ঠান। বর্তমানে এটি কলকাতা কর্পোরেশনের অধীনে। অতীতে রাজবাড়ির উত্তরাধিকারী রাধাকান্ত দেবের কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে,বিভিন্ন আলোচনা,বিধবা বিবাহ নিয়ে বিতর্ক সভা কি না হয়েছে এইখানে।
আমরা সব ঘুরে ঘুরে দেখছি।হঠাৎ ঘটলো এক অভিনব ঘটনা।চা,জল থেকে শুরু করে জলযোগ টুর কর্তাদেরই দেবার কথা ছিল কিন্তু পরিবেশনা ছিল বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ।সবাইকে বসিয়ে পরিবেশন করা হলো - পুঁটীরামের কচুরি, ভীম চন্দ্র নাগের সন্দেশ,নলিন চন্দ্র দাসের রসগোল্লা ও দ্বারিক ঘোষের ছানার পায়েশ। অতুলনীয়!যাকে বলে,রাজবাড়ির নাটমন্দিরে বসে রাজকীয় স্বাদ।
Related Posts : Chatu-Babu-Latu-Babu, Tagore's House in England, Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo, Sovabazar Rajbari Durga Puja, Gobardanga Jamidar Bari Puja
এই রসাস্বাদনের পর এবার বাসে ওঠার পালা। নতুন এক অতীতের খোঁজে। হেরিটেজ একটি বাস দাঁড়িয়েছিল মেন রাস্তায়।উঠলাম।চললাম এবার মার্বেল প্যালেসের পথে।
মার্বেল প্যালেস :-
প্রকান্ড এক শ্বেতপ্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়ালাম। পাহাড়াদার মূল ফটকখুলে দিলে,ঢুকলাম। ৪৬,মুক্তরামবাবু স্ট্রীটের মল্লিক বাড়িতে। রাজেন্দ্র নাথ মল্লিকের তৈরি এই বাড়ি। বাঙালি ধনী ব্যবসায়ী নিজের প্রতিপত্তি,আড়ম্বর ও বিলাসিতা দেখাতে ১৮৩৫ সালে ফরাসি স্হপতি দিয়ে তৈরি করেন এ বাড়ি। তাঁর যেমন ছিল ধনরত্নের ভান্ডার তেমনই ছিল দেশবিদেশের দামী মূল্যবান জিনিস সংগ্রহ করার ঝোঁক। ফলস্বরূপ, বাড়ি হয়ে উঠলো নির্দশনের আখরা।
পুরো বাড়িটি ইটালিয়ান মার্বেলের তৈরি।১২৬ রকমের বিভিন্ন মার্বেল আনা হয়েছিল দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।তখনকার দিনের প্রেক্ষিতে ভাবলে সত্যি অবাক লাগার মত।না জানি, কত বিত্তবান ছিলেন তিনি।প্রাসাদে মার্বেলের এমন নিখুঁত ও আধিক্য দেখে মুগ্ধ হয়ে, ইংরেজ গভর্নর 'লর্ড মিন্টো' নামকরণ করেন মার্বেল প্যালেস।
এই প্রাসাদ সৌন্দর্য্য ও শিল্পসম্ভারের জন্য যেমন বিখ্যাত ছিল আর একটি কারণ ও ছিল।এই মল্লিক বাড়ির উদ্যানেই গড়ে উঠেছিল "কলকাতার প্রথম চিড়িয়াখানা",যা আজ ও আছে। অতুল সম্পদের জন্য তিনি রাজা বাহাদুর খেতাব পান।


ভবনটির ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য, অসংখ্য চিত্রকর্ম,যা বিশাল বিশাল ক্যানভাসে আঁকা।এর মধ্যে অন্যতম শিল্পী রুবেন্সের আঁকা দুটি চিত্র। সেই যুগেও তিনি ইতালি,ফ্রান্স,রোম থেকে এনেছিলেন নানা সম্ভার।মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বিস্তৃত বেলজিয়াম কাঁচের তৈরি আয়না ঘরের শোভা আরো বাড়িয়েছে যেন।কত রকমের যে ঝাড়বাতি,দামী কার্পেট,বিভিন্ন আকারের দৃষ্টিনন্দন ঘড়ি,কাঠের ও পাথরের কারুকার্য করা আসবাবপত্র,যা একপলকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সুদূর অতীতে।

সংগৃহীত :- প্যালেসের ভিতর ( Pic collected from Net )

সংগৃহীত ( Pic collected from Net )
তিনতলা এই পালেসটিতে ছিল -বৈঠকখানা,ছবির ঘর,স্থাপত্যের ঘর,বিলিয়ার্ডস রুম,ঠাকুর দালান,, মিউজিক রুম বা নাচ ঘর ও বল রুম,যেখানে চলত বল ড্যান্স।এত বৈভব একসাথে দেখে হতবাক হতে হয়।চোখ ঝলসে যাচ্ছিল যেনো। বাড়ির সামনে যে বাগান আছে সেখানেও আছে ফোয়ারা ও বিভিন্ন ভাস্কর্য।রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুরের উত্তরাধিকারীরা এখনও এই প্রাসাদে বাস করেন।প্রাসাদের ভিতরে রয়েছে জগন্নাথ মন্দির, যেখানে অবশ্য পরিবারের লোক ছাড়া প্রবেশের অধিকার নেই। জানিনা,কতটা তুলে ধরতে পারলাম এই প্রাসাদ কে আপনাদের সামনে।তবে এটুকু বলতে পারি উত্তর কলকাতার এই মার্বেল প্যালেস এখনও অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বাবু সংস্কৃতি ও বিলাস বৈভবের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এবার বিদায় পালা। যাবো এবার জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি।
(প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য,জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি কিন্তু আলাদা দুটো বাড়ি )
জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি :-
বাড়িতে পা দিয়েই বুঝলাম এই বাড়ি বহু প্রাচীন।২৭৫ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে এই বাড়ি। উওর কলকাতার প্রাচীনতম বনেদী বাড়ির মধ্যে অন্যতম এই 'জোড়াসাঁকোর রায় ভিলা '।চিৎপুর রোডে,রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের পরিবার এটি। একতলা ছেড়ে দোতলায় গেলাম।সঙ্গে চললো এ বাড়ির বয়স্ক কেয়ারটেকার, যে এবাড়িরই পুরাতন ভৃত্য। সে এক একটা ঘর খুলছিল ও গল্প বলছিল ঘটে যাওয়া অতীতের।যেনো অতীতের একটা পর্দা উঠছে আর একটা নামছে। সবকিছুর মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ঝালড়ঝোলানো বারান্দা। তবে বলতে দ্বিধা নেই,বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ দরকার কোথাও কোথাও।
বাড়িটি যে রোডে সেই চিৎপুর হলো কলকাতার প্রাচীনতম রোড।কলকাতার প্রথম ট্রামলাইন এই রোডেই চালু করে ব্রিটিশ সরকার।সিঙ্গেল ট্রাম,এখনকার মত ডবল ট্রাম নয়।এখন যদিও চলে না আর এই রোডে। জোড়াসাঁকো তে একসম়য় সত্যিই জোড়া সাঁকো ছিল,গঙ্গা বোয়ে যেতো।জুড়ি ঘোড়া চলত।এখন সেসব ইতিহাস। এখান থেকে ৩-৪ মিনিট হলো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। যাবো এরপর সেদিকেই।
(পরিক্রমা চলবে এভাবেই................পরবর্তী পর্বে)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any query, please let me know.