Chatu Babu Latu Babur Bari - Bonedi Barir Durga Puja
Chatu Babu Latu Babur Bari-Bonedi Barir Durga Puja-Ramdulal Nibas
বিডন স্ট্রীটের এই বাড়িটি কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য।রাস্তার একদম ওপরেই দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িতে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। রামদুলাল দে (দে সরকার) হলেন এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা।রামদুলাল দে ছিলেন বাংলার প্রথম কোটিপতি। যদিও পরবরতীকালে এই বাড়ি ছাতু বাবু - লাটু বাবুর বাড়ি হিসাবে বেশি পরিচিত আজ।
ছাতু বাবু - লাটু বাবুর বাজার, লেন এসব হয়ত আপনাদের জানা। বিডন স্ট্রীটের ও হরি ঘোষ স্ট্রীট এই দুই রাস্তার সংযোগস্থলে ছাতু বাবু ও লাটুবাবুর বাজার বসে।আয়তনে বাজারটি বেশ বড়।বাজারের শেষে এই বাড়ি।যার ঠাকুরদালানে পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু এবাড়ির কৃতিত্ব কিন্তু এনাদের না,এনাদের বাবা রামদুলাল দে(দে সরকার) মহাশয়ের। তাই ওনার ইতিহাস না জানালে এই বাড়িকে জানানো সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।
You can also visit: Top 50 Bonedi Barir Durga Pujo, Sovabazar Rajbari Durga Puja, Kolkata Heritage Buildings
রামমদুলাল দে কে ইন্দো-আমেরিকান ব্যবসার পথিকৃৎ বলা চলে।ইনি ছিলেন প্রথম আধুনিক বাঙালি ধনকুবের। সেসময় আমেরিকার ব্যবসায়ীরা এতটাই তার পুঁজি নির্ভর ছিলেন যে তার নামে একটি জাহাজের নামকরণ করা হয়েছিল 'Ramdulal De' যেটা Boston (আমেরিকা) থেকে Kolkata এসেছে বহুবার।
এই রামদুলাল বাবু নিজের জীবন শুরু করেন অত্যন্ত দারিদ্রের সঙ্গে।জন্ম দিতে গিয়ে মা ও কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা গেলে,দিদা দাদুর কাছে মানুষ হন।দিদা ছিলেন মদন মোহন বাড়ির ( হাট খোলার দত্ত বাড়ির) রাঁধুনি।সেই সূত্রে ওই বাড়ির ছেলেমেয়েদের সাথেই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার পাঠ শেষ করে গৃহকর্তার আনুকূল্যে অফিসের ৫ টাকা মাইনে কেরানি হয়ে যোগ দেন।খুব শিগগিরই সেটা বেড়ে মাসিক ১০ টাকা হয়।সেই সময় একটি জাহাজের নিলামে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জাহাজ নিলাম করেন রামদুলাল দে।সুযোগ ছিল মালিককে ঠকানোর কিন্তু সৎ এই কর্মচারী মালিকের হাতে তুলে দেন পুরো লক্ষ টাকা।খুশি হয়ে মদন মোহন দত্ত তাকে পুরস্কার দেন এই টাকাই ও বলেন, নিজের ব্যবসা শুরু করতে।সেই এক লক্ষ টাকা ছিল তার ধনকুবের হবার প্রথম পুঁজি।আর ফিরে তাকাতে হয়নি কোনোদিন ও তাকে।তৈরি করেন ' রামদুলাল নিবাস '। তার ছিল তীব্র ব্যবসায়িক বুদ্ধি।উনিই প্রথম ভারতে বরফ আমদানি করেছিলেন কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে।
দুশতক আগে ছেলেদের জন্য রেখে গেছিলেন ১২৩,০০,০০০ টাকা,যা অকল্পনীয়।
যদিও তার দুই দত্তক পুত্র ছাতু বাবু(আশুতোষ),লাটু বাবু(প্রমথ নাথ) তৎকালীন বাবু সম্প্রদায়ে জীবন কাটাতে থাকেন। কলকাতার বাবু কালচারের দুই দিকপাল ছিলেন এই দুই ভাই।বুলবুলির লড়াই ও আরও নানান অদ্ভুত সখের জন্য বাবু সম্প্রদায়ের কাছে এই দুই ভাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।ছাতু বাবুর ছিল গানবাজনার সখ। মতান্তরে, ছাতুবাবু হলেন প্রথম বাঙ্গালী সেতার বাদক। তাই নাচঘর থাকতো সবসময় জমজমাট।এসেছিলেন বিখ্যাত নর্তকী গহরজান থেকে পণ্ডিত রবি শঙ্কর। 'ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিক' এ এবাড়ির সুনাম সকলেরই জানা।
অনুষ্ঠান করতে এবাড়িতে এসেছেন গুলাম আলী খান,আমির খান,উদয় শঙ্কর,রবি শঙ্কর, ভিলায়াত খাঁ, রোশন কুমারী,আল্লারাখা সহ আরো কত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব।
১৭৭০ সালে দুর্গাপূজা শুরু করেন। লাল ইটের তৈরি এই প্রাসাদ আজও বজায় রেখেছে বনেদী দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য। কলকাতার বনেদী পুজোর মধ্যে অন্যতম এই বাড়ির পুজো। পুজো চলছে প্রায় দুশো বছরের বেশি সময় ধরে। সব বনেদী পুজোর কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। মা দুর্গাকে দশমহাবিদ্যা রুপে পুজো করা হয়।দশদিন ধরে চলে পুজো।প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠীর দিন অবধি চলে শালগ্রাম শিলাতে পুজো।তারপর এখানে শাক্ত,বৈষ্ণব ও শৈব এই তিনটি বিয়মের মিলনে দেবীর আরাধনা হয়ে থাকে।
ছবি : ছাতুবাবু-লাটুবাবুর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
মায়ের বাহন সিংহ এখানে ঘোড়া মুখো।যেটা অভিনব।মা সজ্জিত হন বহুমূল্য গয়নায়,পরিহিত হন 'Naulakha Necklace'। আভিজাত্য ও ধন দৌলতের মেলবন্ধন যেনো। এই রামদুলাল নিবাসে,মা লক্ষী ও সরস্বতীকে জয়া ও বিজয়া এই দুই নামে পুজো করা হয়। লক্ষী সরস্বতী এখানে বীণা ও ঝাঁপির পরিবর্তে পদ্মাসনে অধিষ্ঠিতা। ১০৮ প্রদীপ জ্বেলে সন্ধিপুজো হয়।অষ্টমীতে কুমারীপূজা হয় নিষ্ঠা করে।অষ্টমীর পুজোর পর মহিলারা সিঁদুর খেলেন।এটাই এ বাড়ির রীতি রেওয়াজ। বিসর্জনে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি ছিল। এখন পুজো ট্রাস্টের মাধম্যে সম্পন্ন হয়।পুজোর সময় সবার অবাধ প্রবেশ।দুর্গা পুজোতে ভোগের কিন্তু আলাদা মাহাত্ম। আর ভোগের ক্ষেত্রেও থাকে বাড়ি বিশেষে আলাদা আয়োজন।এই বাড়িতে ভোগ হিসাবে মাকে নিবেদন করা হয় লুচি ও তিন রকম ভাজা।সব শুদ্ধ ঘি তে ভাজা।ভোগ রান্না হয় নুন ছাড়া। সাথে চাল,ফল,দই,মিষ্টান্ন সহযোগে নৈবেদ্য তো আছেই।
দুর্গাপুজো ছাড়াও এবাড়িতে কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো,ঝুলন বেশ ভাল করেই পালন করা হয়।আগের জৌলুস না থাকলেও আভিজাত্য ও নিষ্ঠায় ভাঁটা পড়েনি কখনোই।
অতিথিদের জন্য থাকে বৃহদাকার আয়োজন। অতিথি সেবায় যথেষ্ট সুনাম আছে এনাদের। অনেক পদের মধ্যে বিশেষ করে রাধাবল্লভি, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা,ফুলকপির তরকারি,দই,দরবেশ, লেডিকেনি থাকে অতিথি সেবার মেনুতে।
এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয় এই বাড়ি।
ছবি : ছাতুবাবু-লাটুবাবুর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
Address : “Ramdulal Nibas”, 67E Beadon Street ( Alias Dani Ghosh Street), North Kolkata 700006
খুবই সুন্দর লিখেছেন, ছবিগুলোও খুব সুন্দর, বলছিলাম যে রমদুলাল দে মহাশয় সম্বন্ধে জানলাম খুব ভালো লাগলো, কিন্তু যাদের থেকে পরিচিতি অর্থাৎ ছাতু বাবু এবং লাটু বাবু তাদের সম্বন্ধে একটু বিশদে জানতে পারলে আরো ভালো লাগতো আর তার সঙ্গে এনাদের দুজনের ছবি থাকলে আরো সুন্দর লাগতো এমনিতে সত্যিই খুব সুন্দর হয়েছে
উত্তরমুছুন